বায়োমেট্রিক নিবন্ধন চলছে রোহিঙ্গাদের, মাইন বিস্ফোরণে নিহত ১
মিয়ানমারে অব্যাহত নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আঙ্গুলের ছাপ গণনা বা বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ ২য় দিন মঙ্গলবার শুরু হয়েছে৷
গতকাল বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিবন্ধনের কাজ শুরু হয় তবে আবহাওয়া ভালো না থাকায় কিছু কাজ করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
আজ-সকালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যার্পন ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার স্বার্থেই এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া।
প্রথম নিবন্ধিত হন রোহিঙ্গা নারী রুবিয়া খাতুন। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পাশাপাশি অনেক রোহিঙ্গাকেই পরিচয়পত্রও দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তের মিয়ানমার অংশে মাইন বিস্ফোরণে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে সীমান্তেই মারা যান সাত জন।
রুবিয়া খাতুন। জীবন বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইনে নিজ বসতি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। সোমবার শুরু হওয়া রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে প্রথম নিবন্ধিত হন ৬০ বছরের এ বৃদ্ধা।
রাত পৌণে ৯টায় রুবিয়ার নিবন্ধনের পর পরীক্ষামূলকভাবে ২০জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন করা হয়। আর আটজনকে দেয়া হয় পরিচয়পত্র।
কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে সকাল থেকেই জোরেশোরেই নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়। এ কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্য নেয়ার পাশাপাশি তাদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের মণির ছবিও নেয়া হচ্ছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের পাশাপাশি অন্যান্য স্থানে আরও ১৫ থেকে ২০টি কেন্দ্র খুলে প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ চলবে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ করছে। কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ফলে এবার আসা তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সম্পর্কে তথ্য সরকারের কাছে থাকবে। পাশাপাশি নিবন্ধনের পর যে কার্ড দেয়া হবে তা রোহিঙ্গাদের রেশন, খাবার, স্বাস্থ্য সুবিধা, শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
এদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তে আবারো স্থলমাইন বিষ্ফোরণে এক যুবক নিহত হয়েছেন। পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় সোমবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার জামছড়ির গর্জনতলী সীমান্তের মিয়ানমার অংশে এ ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে ওই যুবকের স্ত্রী'রও একটি পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে দমনপীড়ন শুরু হলে সহিংসতার মুখে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে ছুটে আসছেন রোহিঙ্গারা। গত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংখ্যায় কম হলেও এখনো রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে দুটি আর বাংলাদেশ সরকারের গণনা অনুযায়ী মোট ৩২ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা এদেশে রয়েছেন। এরমধ্যে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন ১৪ হাজার রোহিঙ্গা।
আর টেকনাফের নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন ১৮ হাজার রোহিঙ্গা। এর বাইরে অনিবন্ধিত আরও ৫টি পুরনো শরণার্থী শিবির রয়েছে ওই এলাকায় যেখানে আনুমানিক দেড় লাখ রোহিঙ্গারা বাস করছেন।