চলে যা- নইলে সবাইকে মেরে ফেলব
মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত দুটি গ্রামে আটকে পড়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের নিরাপদে বেরিয়ে পাওয়ার সুযোগ করে দিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় বৌদ্ধরা ওই গ্রাম দুটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এবং সেখানে খাদ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে।
সেখানে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
দু'টি গ্রামের একটির নাম আহ নউক পিইন সেখান থেকে মং মং নামে এক রোহিঙ্গা কর্মকর্তা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, 'আমরা আতঙ্কিত। আমদের খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং তারা আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, রাখাইনের স্থানীয় বৌদ্ধরা এই গ্রামে এসে চিৎকার করে বলে গেছে, 'চলে যা, নইলে সবাইকে মেরে ফেলব।'
রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্পর্ক এমনিতেই ছিল বেশ শীতল।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশের বেশ কিছু চৌকিতে হামলার পর সেখানে অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। হামলার জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দায়ী করে সেখানে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
রয়টার্সের তথ্য অনুসারে, রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
পালিয়ে আসা এ রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই বলছে, বিদ্রোহীদের দমনের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ করছে এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ বলছে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের 'জাতিগতভাবে নির্মূল' করছে মিয়ানমার।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের দমনে অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া বিদ্রোহীরাই রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলেও দাবি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর আগ পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাত করতো। এদের প্রায় সবারই রাখাইন রাজ্যের বাইরে যাওয়ার কোনো অনুমতি ছিল না এবং তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়নি মিয়ানমার। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মতে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী।
রাখাইন রাজ্য সরকারের সচিব টিন মং সুয়ি রয়টার্সকে বলেন, তিনি রাজ্যের রাথেডং শহর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছেন এবং রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ চাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সেখানে উদ্বেগের মতো কিছু নেই। রাথেডংয়ের দক্ষিণাঞ্চল সম্পূর্ণ নিরাপদ।'
মিয়ানমার পুলিশের মুখপাত্র মিয়ো থু সোয়ে বলেন, রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের বিষয়ে তার কাছেও কোনো তথ্য নেই। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।