জয়পুরহাটে-চাল নিয়ে চালবাজি-মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত-নিয়ন্ত্রন নেই প্রশাসনের।
জেলা ব্যুারো প্রধান:জয়পুরহাট:- চালের মূল্য বৃদ্ধি, চাল কল মালিকগনের চাল সংরক্ষন,সরকারী খাদ্য গুদামে চাহিদার চেয়ে কম মজুত সহ চাল নিয়ে জয়পুরহাটে চলছে চালবাজী।
গত ১৮-২০ সেপ্টেম্বর তিন দিনে জয়পুরহাট বাজারে সব রকম চাল কেজি প্রতি ৫-৮ টাকা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ ২১ সেপ্টেম্বার বৃহস্পতিবার জয়পুরহাট আমতলী পাইকারি চাল বাজারে নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, হাইব্রিড ৫৫, বিআর(২৮) ৪৮, স্বর্না ৫৮,লোকাল মোটা চাল ৪৩ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৫-৮ টাকা বেশী।
জয়পুরহাট জেলায় চালের মূল্য বৃদ্ধির সঠিক কারন কেউ বলতে না পারলেও খুচরা বিক্রেতা পাইকারী বিক্রেতাকে, পাইকারী বিক্রেতা চাল কল মালিক গনকে দায়ী করছে নিয়মিত। এছাড়াও সরকারি গুদামে চাল মজুত না থাকা এবং সেই সুযোগ নিয়ে জয়পুরহাটের চাল কল মালিকগন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের মূল্য বৃদ্ধি করছে বলেও জানান -কিছু ছোট ছোট চাল ব্যবসায়ীগন।
জেলা খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা(এসএমও) সৈয়দ আতিকুল হক জানান- এ মৌসুমে চাল সংরক্ষনের টার্গেট ছিল ৪৭৭০ মেট্রিক টন। যার বিপরিতে চাল কলের সাথে চুক্তি হয় মাত্র ২০৮২ মেট্রিক টন।যার বিপরিতে আজ পর্যন্ত সংগ্রহ হয় ১৫৩৫ মেট্রিক টন। যার মধ্যে বর্তমান(২১ সেপ্টেম্বর) চাল সংরক্ষিত আছে ১৩৬১.৩১৮ মেট্রিক টন।যা গত কয়েক বছরের তুলনায় কম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান-জয়পুরহাট জেলায় চুক্তি ভূক্ত চাল কলের মধ্যে *মন্ডল এগ্রো অটো রাইস মিল* তার চুক্তির ৫৩৯.১০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছে। প্রত্যেক চুক্তি ভুক্ত চাল কলের চাল সংরক্ষন মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দেওয়ার নিয়ম থাকলেও* মন্ডল এগ্রো অটো রাইস মিল* ছাড়া কোন মিলই তার চুক্তি মোতাবেক চাল জয়পুরহাট সরকারী খাদ্য গুদামে এখনও সরবরাহ করে নাই। এর মধ্য *আরাফাত আটো রাইস মিলের* সাথে ৪৩২.২৪০ মেট্রিক টন চালের চুক্তি থাকলেও তার বিপরিতে এক টন চালও সরবরাহ করে নাই।
এর কারন হিসাবে তিনি সরকার নির্ধারিত মূল্য কম থাকার কারনে এ মৌসুমে চাল কল মালিকগন সরকারী গুদামে চাল না দেওয়া এবং বেশী মুনাফার আশায় তা খোলা বাজারে বিক্রি করাকে দায়ী করলেন।
জয়পুরহাট সরকারি জেলা খাদ্য গুদামের তালিকা অনুযায়ী জয়পুরহাট জেলায় সরকার কর্তৃক চুক্তি ভুক্ত চাল কল আছে ৬ টি। এর মধ্যে ১/২ টি ছাড়া প্রায় সব চাল কল সরকার কর্তৃক চুক্তি ভুক্ত হওয়ার পরও চাল সরকারী খাদ্য গুদামে না দিয়ে তা বেশী মুনাফার উদ্দ্যেশে সংরক্ষন করে রেখেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যপারে জয়পুরহাট (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) এক অটো রাইস মিল মালিক বলেন বেশী মুনাফার উদ্দ্যেশে চাল সংরক্ষনের কথা সঠিক না। এ বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ, চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকা, সরকার নির্ধারিত মুল্য কম থাকা সহ বেশ কিছু কারনে অটো রাইস মিল মালিকগন সময় মতো চাল উৎপাদন করতে না পারায় সাময়িক চালের বাজার একটু অস্থির।
তবে উক্ত অটো রাইস মিল মালিকের কথা আর বাস্ত্যব চিত্র আলাদা। খোজ নিয়ে জানা যায়-বাজারে চালের সরবরাহ কম থাকলেও প্রায় প্রতিটি চাল কলের গুদামে যথেষ্ঠ পরিমান চাল মজুত আছে।
এ দিকে চাল মজুত করা এবং বেশী দামে তা বাজারজাত করার অপরাধে সরকার নঁওগা,কুষ্টিয়া,যশোহর সহ বেশ কিছু জেলার চাল কল মালিক এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রতিবাদে অনেক মালিকগন সর্ম্পুন নিজ ইচ্ছায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে চাল সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম ভাবে চালের মুল্যবৃদ্ধি করছে বলেও জানা যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে (নাম না প্রকাশের শর্তে) জয়পুরহাট সরকারি খাদ্যগুদামের এক কর্মকর্তা জানান জয়পুরহাট জেলার চাহিদা অনুযায়ী সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সংরক্ষিত না থাকলেও জেলার প্রায় সব চাল কলে চাল মজুত আছে যথেষ্ট।সরকারের সঠিক তদারকির অভাবে এবং কিছু কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় কিছু নেতার অসৎ কর্মকান্ডের কারনেই মুলোতো জয়পুরহাট জেলায় চালের মুল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাজার কমিটি জানায়-সরকার তার নির্ধারিত বাজার মনিটরিং সংস্থা,আইনশৃঙ্খলা বাহিনি এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিটি চাল কল পরিদর্শন নিয়মিত করন এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন সহ দুর্নিতীমুক্ত বাজার মনিটরিং করলে চাল সহ সব ধরনের খাদ্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।
এদিকে চাল সহ প্রায় সব ধরনের খাদ্য সামর্গ্রীর দাম উর্ধোগতির কারনে জয়পুরহাট জেলার নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। অনেকে চালের মূল্য বৃদ্ধির কারনে পরিবারে খাবারের পরিমান কমিয়ে ফেলতেও বাধ্য হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে এখনই চালের মূল্য নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে সরকার আগামী নির্বাচনে সমস্যায় পড়তে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।