কালীগঞ্জে ময়েজ উদ্দিন আহম্মেদ এর ৩৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত
মোঃ লোকমান হোসেন পনির, কালীগঞ্জ (গাজীপুর): গাজীপুরের কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত সাবেক এমপি শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহম্মেদের ৩৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনের মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার সময় তৎকালীন এরশাদ সরকারের লেলিয়ে দেয়া কতিপয় সন্ত্রাসী কালীগঞ্জে ময়েজ উদ্দিন আহম্মেদের উপর হামলা করলে তিনি ঘটনাস্থলেই শাহাদাৎ বরণ করেন।
গতকাল বুধবার সকালে শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের কন্যা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি, শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি আক্তার উজ্জামান, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গণি ভূঞাসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বনানী কবরস্থানে শহীদের কবরে শ্রদ্বাঞ্জলী অর্পণ ও শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
সকাল ১১টায় প্রতিমন্ত্রী চুমকি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে শহীদের স্মরণে এক শোক সভায় অংশগ্রহণ করে উপজেলা চত্বরে শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহম্মেদের স্মৃতিস্তম্ভে পূষ্পার্ঘ অপর্ণ করেন। পরে দুপুরে মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে প্রতিমন্ত্রী চুমকি’র পৈত্রিক বাড়ীতে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভা ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন এবং গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেন।
স্মরণ সভায় বক্তাগণ বলেন, ১৯৮৪ সালের এই দিনে গণতন্ত্র তথা ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কালীগঞ্জে নেতৃত্ব দেয়ার সময় তৎকালীন এরশাদ সরকারের লেলিয়ে দেয়া কতিপয় সন্ত্রাসী তাঁর ওপর স্বশস্ত্র হামলা চালালে তিনি ঘটনাস্থলেই শাহাদাৎ বরণ করেন। শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহম্মেদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা প্রবল গণআন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের বিজয় হয়।
শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহম্মেদ ১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। এছাড়াও তিনি একজন বিচক্ষণ আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির (এফপিএবি) মহা-সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন দেশ প্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাধারণ জনকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ হিসেবে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছে।
স্মরণ সভায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আশরাফী মেহেদী হাসান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবিএম তারিকুল ইসলাম, যুব বিষয়ক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমেদুল কবির, সহ-সভাপতি এস.এম রবিন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম দেওয়ান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর-রশিদ টিপু, পৌর যুবলীগ সভাপতি বাদল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফী রেজাউর রহমান খোকন, দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল হক শিশির, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাওহীদ প্রমূখ।