আজ বিজয়া দশম,ঝালকাঠিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি দূর্গাপূজার।।
মোঃমোছাদ্দেক বিল্লাহ (বিশেষ প্রতিবেদক) বাজছে বিদায়ের সুর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার শেষ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন গতকাল শুক্রবার মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতি শেষে দেবীর বন্দনায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিষাদের সুর বাজতে শুরু করে। আজ মা দুর্গার বিদায় মহানবমীতে গতকাল পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৬টায়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আরতি প্রতিযোগিতা। দিনভর চলেছে চণ্ডীপাঠ আর ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহানবমীতে বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে ছিল ভক্ত ও দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। নবমী পূজা শেষে অশ্রুসজল নয়নে ভক্তরা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি দিয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, নবমী তিথিতে রাবণ বধের পর শ্রী রামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল, যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী গতকাল শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা শুরুর পর ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকে দেবীর উদ্দেশে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আজ মা দুর্গার বিদায়। তাই গতকাল শেষবারের মতো দেবীর আশীর্বাদ কামনায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের ভক্ত নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করে। প্রতিটি মণ্ডপেই কয়েক দফা করে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। বিদায়বেলায়ও চলেছে ঢাক আর শঙ্খধ্বনি, টানা মন্ত্র পাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, ঢাকের বাজনার সঙ্গে ছিল ধুনচি নৃত্য। সন্ধ্যায় আরতির পাশাপাশি মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অষ্টমীর রাত থেকে শুরু হয়ে নবমীর সারা দিনই কম-বেশি বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল ভক্ত ও দশনার্থীর ভিড়। ঝালকাঠির ১৭২ মন্ডপে,কাঠালিয়া,রাজাপুর, নলছিটি, উপজেলার কাঠালিয়া সদর দাস পাড়া মন্দির,সদর মন্দির,আমুয়া সর্বজনীন দূর্গা মন্দির,আওরাবুনিয়া চৌদিরিহীসা দূর্গা মন্দির,ঝালকাঠি সদর সর্বজনীন দূর্গা মন্দির, গুলোতে আয়োজনে ভিড় ছিল বেশি। এই ভিড় সামলাতে পুলিশ-র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় মন্ডপ গুলোতে দশমী পূজা শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা ৫১ মিনিটের মধ্যে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণ। মূল মূল মন্দির গুলো থেকে বিকেল ৩টায় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করবে। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্তলোকে (পৃথিবী) আসেন নৌকায় চড়ে; যার ফল হচ্ছে অতি বৃষ্টি ও শস্য বৃদ্ধি। আর মা দুর্গা স্বর্গলোকে বিদায় নেবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে, যার ফল হচ্ছে রোগ-ব্যধি বাড়বে ও ফসল নষ্ট হবে। তবে এ বিষয়ে আওরাবুনিয়া মন্দিরের সাধারন কৃষ্ন হালদার বলেন, ফলাফল যাই হোক মা মঙ্গলময়ী, আনন্দময়ী। তিনি জগতের কল্যাণ করেন। তিনি সন্তানের কল্যাণই করবেন।