কালীগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহবধু নির্যাতন
লোকমান হোসেন পনিরঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন মিলে এক গৃহবধুকে হাত-পা বেধে বৈদ্যুতিক শক ও গোপনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে। গৃহবধুর পিতা বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ স্বামীকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করেছে।
নির্যাতিতা ঐ গৃহবধুর পিতা মাসুদ মিয়া জানান, প্রায় নয় মাস পূর্বে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তর ভাদার্ত্তী গ্রামের মোজাম্মেল হক মুজার পুত্র রতন মিয়ার সঙ্গে তার মেয়ে খাদিজা আক্তারের (১৯) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে খাদিজাকে হত্যার উদ্দেশ্যে শ্বশুর মুজা ও ভাসুর মানিক তাকে ঘরের ভেতর আটকে রেখে নেশা খাইয়ে হাত পা বেধে লোহার রড় দিয়ে তার মাথা, হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এসময় খাদিজার স্বামী রতন তার ঘাড়ে একাধিকবার বৈদ্যুতিক শক ও গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। তারা খাদিজার চিকিৎসা না করে অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ীতে ফেলে রেখে শনিবার রাতে আমাকে মোবাইল ফোনে জানায় খাদিজা অসুস্থ্য, আপনি এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে আমি দ্রুত মেয়ের শ্বশুর বাড়ী গিয়ে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সেখানে চিকিৎসা করতে না পেরে পুনরায় খাদিজাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।
সরেজমিনে গতকাল সোমবার সকালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে শুয়ে খাদিজা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাও-মাও করে কেঁদে উঠে। তিনি বলেন, আমার স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুর আমাকে নেশা খাইয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। স্বামী রতন আমার ঘাড়ে অনেক বার বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাত-পা বেধে গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে অত্যাচার করে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তার অবস্থা শংকটাপন্ন দেখে জরুরী কিছু পরীক্ষা করার জন্য ঢামেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে সেখান থেকে ফিরে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ মো. ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, আমরা সাধ্যমত নির্যাতিতা ঐ নারীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম বলেন, খাদিজার গোপনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী রতনকে গ্রেফতার করে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঐ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্যাতিতা গৃহবধু খাদিজা আক্তার উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোম গ্রামের বাবুর্চী বাড়ীর মো. মাসুদ মিয়ার মেয়ে।