কালীগঞ্জে অস্ত্রের মুখে ছাত্রী ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ মামলা তুলে নিতে বাদীকে চাপ
মোঃ লোকমান হোসেন পনিরঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে পঞ্চম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই দফা ধর্ষণ ও ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে আসামী পক্ষের লোকজন ঐ ছাত্রীর পরিবারকে হুমকি এবং চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধর্ষিতা ও তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন পর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী গ্রামের ঘোষ পাড়ার মানিক কাজীর কন্যা ও বেরুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে বিকালে স্কুল ছুটির পর বাড়ী ফেরার পথে স্থানীয় সাইজুদ্দিনের পুত্র রাজু ও কাশেম আলীর পুত্র শ্যামলের সহযোগীতায় মুরালী রবি দাসের পুত্র সাগর রবি দাস আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাস্তা থেকে নির্জন জঙ্গলে তুলে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ এবং মোবাইল ফোনে তা ভিডিও ধারণ করে। পরে এ ঘটনা কারো নিকট প্রকাশ করলে ধর্ষণ দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনার কয়েকদিন পর স্কুল থেকে আসার পথে সাগর তাকে পুনরায় ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর ধর্ষিতা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলে গ্রামের মন্টু রবিদাসের পুত্র সঞ্জিবন রবিদাস তার বাড়ীতে গিয়ে সাগরের সাথে দেখা করতে বলে। ধর্ষিতা দেখা করতে না চাইলে সাগর বাড়ীতে এসে তার ভাবী কণার সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাকে হুমকি দিয়ে যায়। ধর্ষণের ঘটনাটি দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও গত ৩ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১০টায় রাজু ও শ্যামল ধর্ষক সাগরকে ফুলদী কোষাঘাটে আটক করে টাকা দাবি করে। অন্যথায় তারা ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনা প্রকাশ করে দিবে বলে হুমকি দিলে তাদের মধ্যে মারামারির হয় এবং বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় গত ৬/১০/২০১৭ইং তারিখ ধর্ষিতার মা সমতা বেগম বাদী হয়ে ধারা ৮(১)২০১২ সালের পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও ৯(১)৩০ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ জোর পূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহায়তা করা এবং অশ্লীল ভিডিও ধারণের অভিযোগে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং ৪/২৬০।
ধর্ষিতার পিতা মানিক কাজী জানান, মামলা দায়েরের পর গত ৮/১০/২০১৭ইং তারিখ সকালে গ্রামের মৃত আবেদ আলীর পুত্র মীর মামুন আইনের লোক পরিচয় দিয়ে তার বাড়ীতে গিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। আসামী শ্যামল ও রাজুর চাচা মিজানুর রহমান বক্তারপুর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং অপর চাচা কাজী বাশার গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক। তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণেই আসামীদের গ্রেফতারে বিলম্ব হচ্ছে এবং মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়লে লোক লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মেয়েকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তার খালার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ সারোয়ার হোসেন বলেন, মারামারির ঘটনার খবর পেয়ে কোষাঘাটে গিয়ে আমি ভিডিও ও ধর্ষণ ঘটনার কথা জানতে পারি এবং সাগরসহ অন্যান্যদের নিকট থেকে সাতটি মেমোরী কার্ড উদ্ধার করে অফিসার ইনচার্জের নিকট জমা দেই। পরিবারটি খুবই অসহায়। মামলা তুলে নিতে পরিবারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে ধর্ষিতার বাবা আমার নিকট অভিযোগ করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হালিম জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে আসামীরা পলাতক থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।