বেনাপোল কাস্টমস ও সীমান্ত যেন স্বর্ণ ও টাকার খনি? নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী সিন্ডিকেট
মীর ফারুক শার্শা, (যশোর) থেকেঃ বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস ও বেনাপোলের বিভিন্ন সীমন্ত হঠাৎ করে যেন স্বর্ণ টাকার খনিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই ধরা পড়ছে টাকা ও স্বর্ণের ছোট বড় বিভিন্ন চালান। টাকা ও স্বর্ণের চোরাচালানকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চোরাকারবারীরা জুতার ভিতরে, পায়ুপথে, লাকেজের ভিতর, বিভিন্ন পন্থায় বাংলাদেশ ও ভারতে টাকা স্বর্ণ পাচার করে থাকে। বেনাপোল কাস্টমস ও বেনাপোল সীমান্তবর্তী দৌলতপুর, সাদীপুর, পুটখালী অগ্রভুলোট, দিয়ে প্রতিদিন টাকা ও স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রোড হয়ে গেছে। অভিযোগ আছে বেনাপোলের কিছু ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলে শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বলে জানা যায়। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতে স্বর্ণ ও টাকা পাচার হয়ে থাকে। টাকা ও স্বর্ণ পাচারের ফলে বাংলাদেশ সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও ভ্রমণ পিপাসু জন্য ভিসা প্রসেসিং সহজ করায় প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও ভ্রমণ বিলাসী মানুষ বেনাপোল কাস্টমস দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে। এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ভ্রমণের নামে ভারতে গিয়ে সেখান থেকে লাকেজের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসে। যেটা লাকেজ ব্যবসা নামে পরিচিত। এই লাকেজ ব্যবসার অন্তরালে গড়ে উঠেছে স্বর্ণ ও টাকার চোরাচালান। অনুসন্ধানে জানা যায় গত কয়েক দিনে বেনাপোল কাস্টমস ও বিজিবি বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময় টাকা ও স্বর্ণের বিভিন্ন চালান আটক করেছেন। ৩ অক্টোবর ভারতীয় পাসপোর্ট ধারী ২ নারীকে ২৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৫ শত বাংলাদেশী টাকা, ৪ হাজার ১ শত ৮৫ ভারতীয় রুপিসহ ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগণা থানার কৈখালী নারায়নপুর গ্রামের আব্দুল রশিদ এর মেয়ে মোছাঃ জবেদা খাতুন (৫০), একই গ্রামের কাশিনাথ বসাক এর স্ত্রী রেশমা বেগম (৪২) আটক করে বেনাপোল কাস্টমস। ৪ অক্টোবর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা বৈবাটি গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মাহবুব আলম লিটন (৩৫), বেনাপোল চেকপোষ্ট সাদীপুর মোড় থেকে ২২ হাজার ৫ শত মার্কিন ডলার উদ্ধার করে বিজিবি। আটক মার্কিন ডলারের মূল্য আনুমানিক ১৮ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। ৮ অক্টোবর পুটখালী গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মোঃ শিমুল হোসেন (২৭) পুটখালী সীমান্ত থেকে ২ লক্ষ টাকাসহ আটক করে বিজিবি। ৬ই অক্টোবর বেনাপোল কাস্টমস গোপালগঞ্জ মকছেদপুর থানার রজব আলী ছেলে ইয়াকুব মিয়াকে ৫ লক্ষ ৮০ হাজার ৯ শত বাংলাদেশী টাকা ও ২২১ মার্কিন ডলার সহ তাকে আটক করে। একই দিন মোঃ মিজানুর রহমান (৪২) ও মোঃ মাহাবুবুল আলম (৪০) দেহ তল্লাসী করে ৭টি স্বর্ণ উদ্ধার করে বেনাপোল কাস্টমস। আটক মিজানুর রহমান মুন্সিগঞ্জ বর্নিয়ার গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ও মোঃ মাহাবুবুল আলম কুমিল্লার চানদিয়া থানার আব্দুল মান্নানের ছেলে। ১০/১০/২০১৭ ইং তারিখ মঙ্গলবার ১০ পিস স্বর্ণসহ খুলনা ডুমুরিয়া আব্দুল কালামের ছেলে রিপন হোসেন পুটখালী থেকে বিজিবি আটক করে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি মোঃ ওমর শরীফ বলেন, আমরা টাকা ও স্বর্ণ চালান বন্ধের সর্বাত্তক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কার্যত বেনাপোল কাস্টমস গোয়েন্দা শুল্ক শাখার কাজ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও যদি সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় থাকে তাহলে চোরাচালানী বন্ধ করা সম্ভব। বেনাপোল কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা শাখায় ফোন দিলে ফোন রিসিভ করেনি।