গবেষণা শূন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ অধ্যয়ন ইনস্টিটিউট, পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটে গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে আসলে দীর্ঘদিন ধরে কোন গবেষণা পত্র মিলেনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ৬টি ইনস্টিটিউটে। উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে ইনস্টিটিউটগুলোর যাত্রা শুরু হলেও গবেষণার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন আগ্রই নেই। ৫ বছরের তথ্য পর্যালোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ইনস্টিটিউটগুলোকে গবেষণার বাইরে রেখে খোলা হয়েছে সান্ধ্যকালীন কোর্স। নতুন নতুন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা পেলেও গবেষণায় আগ্রত দেখান না সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। এভাবে গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলে সান্ধ্য কোর্স পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও শিক্ষার পরিবেশ দুটাই প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে গত দুই বছরে উচ্চতর ভাষা গবেষণা ও বিভাগগুলোতে ইংরেজি কোর্স পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে খোলা হয়েছে ‘ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেজ ইনস্টিটিউট’। তবে ক্লাসরুম সংকটের কথা জানিয়েছেন ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা। যদিও মূল কাঠামো ও গবেষণা বাইরে রেখে চালু করা হয়েছে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্র্স ও সার্টিফিকেট কোর্স। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বি্শ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট পরিচালক অধ্যাপক আতর আলী নতুন সময়কে বলেন, আমাদের কোন ক্লাসরুম নেই। রুম প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিব। ক্লাসরুম না থাকলে শিক্ষার্থী ভর্তি করবো কিভাবে? তিনি বলেন, শিক্ষকরা বসে থাকবেন কেন? প্রয়োজনেই সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করা হয়েছে। ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট। ১৭ বছর আগে যাত্রা শুরু করা ইনস্টিটিউটটিতে এখন সান্ধ্যকালীন এমবিএ, এম.ফিল পিএইচডি প্রোগাম চালু আছে। এদিকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তিও শুরু হয়েছে। সেখানে গবেষণা কোন খোঁজ মিলেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ইনস্টিটিউটের ৪ জন শিক্ষকের কোন গবেষণা পত্রই পাওয়া যায়নি। ডিগ্রি প্রদানের ক্ষেত্রে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হয়েছে মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থীকে আর যেখানে এই ৫ শিক্ষাবর্ষে কোন গবেষককেই পিএইচডি দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম ইস্টিটিউটের মাধ্যমে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। বর্তমানে এম.ফিল, পি-এইচ.ডি, পি.জি.ডি.এড, এম.এড কোর্স চালু আছে। দুই বছর আগে সেখানে নতুন করে চালু হয়েছে ৪ বছর মেয়াদি সম্মান কোর্স। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে সেখানে দায়সারা ভাবে কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৯-১০ থেকে ১৪-১৫ এই ৫ শিক্ষাবর্ষে কোন শিক্ষকেরই গবেষণাপত্র নেই। আর গত ৫ শিক্ষাবর্ষে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হয়েছে ১৪ জন শিক্ষার্থীকে। ৯ জন গবেষককে দেয়া হয়েছে পিএইচডি ডিগ্রি। গবেষণা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব নতুন সময়কে বলেন, ইনস্টিটিউট বিভাগের মতো নয়। গবেষণা হলো ইনস্টিটিউটের মূখ্য উদ্দেশ্য। তবে গবেষণা না করে বিভাগের মতো করে ইনস্টিটিউট চললে সেটা অবশ্যই দুঃখজনক। এ বিষয়ে তিনি দাবি করেন, পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই রাতারাতি ইনস্টিটিউট খোলা গবেষণার উদ্দেশ্য ব্যাহত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউটের নামে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করাসহ উদ্দেশ্য থেকে সরে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ ইমিতয়াজ বলেন, যেখানে মূল কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না। সেখানে সান্ধ্যকালীন কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। তাহলে শুধু মাত্র সান্ধ্যকালীন কোর্সের জন্য তো ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন নেই। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী নতুন সময়কে বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্সের জন্য কোন ইনস্টিটিউট খোল হয়নি। গবেষণাসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্য নিয়েই ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে পাশ হওয়া পরিচালনা বিধি অনুযায়ি তারা ইস্টিটিউটগুলো পরিচালনা করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।