বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লে অর্থনীতির উপর কী প্রভাব পড়বে?
ক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি আয় না বাড়লেও বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ফলে ক্রমেই বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লে রিজার্ভ কমে অর্থনীতির উপর চাপ বাড়াবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। এছাড়া আমদানির আড়ালে অর্থপাচার বন্ধের পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন বা ইকোনোমিক ইউনিয়নের সদস্য হওয়া জরুরি বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আগস্টে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৬৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৮৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৮১ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ২৪৫ শতাংশ।
তবে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরজুড়ে ঘাটতির বদলে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে, আগের অর্থবছরে একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৮১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ সময়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সেবা মূল্য ব্যয় বেশি হওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে সেবা খাতে বিদেশিদের বেতন-ভাতা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৪৪ কোটি ডলার। কিন্তু এ খাতে আয় হয়েছে অর্ধেকেরও কম। এই সময় আয় হয়েছে মাত্র ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ছিল ৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অবশ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কৌশল নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন বা ইকোনোমিক ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। বাণিজ্য চুক্তি বাড়ানো ও রপ্তানি বাণিজ্য সহজ করতে যৌথ রুট চালু করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মোট ৫১ কোটি ডলার। এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ৩২ কোটি, যা আগের বছরে এসেছিল ২৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।
আমদানির আড়ালে অর্থপাচার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভাল নয়। অথচ আমদানির মাত্রা বেড়ে গেছে। তবে এবার চাল আমদানির ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু চাল ছাড়াও অন্যান্য খাতে আমদানি বেড়েছে। সেই হারে বিনিয়োগ বাড়ছে কি না- এসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
‘অনেক সময় পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে অর্থপাচার করা হয়। আমদানির আড়ালে এই ধরনের কিছু হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
চাল আমদানি ছাড়াও রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ঘাটতি বেশি হলে রিজার্ভের উপর চাপ পড়বে। এর সমন্বয় করতে হলে রপ্তানি বাড়ানোর বিকল্প নাই। আর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন বা ইকোনোমিক ইউনিয়নের সদস্য হওয়া জরুরি।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি বাড়াতে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশ ভারত ইইউ ও আশিয়ানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে। কিন্তু দু:খের বিষয় আমরা কারও সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারিনি।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সহজ করার জন্য একটা রুট চালু করার কথা ছিল। তা হয়নি। কিন্তু ভারত এখন তার প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সাথে এ ধরনের রুট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকলে ভাল হতো। বলতে গেলে অনেকটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি করছে বলে জানান তিনি।