অবৈধ অভিবাসী পাচার, ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশি দৈনিক আয় ১১ কোটি!
ভূমধ্যসাগর হয়ে অভিবাসী পাচারের নতুন জোয়ারে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টারত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দিনে কয়েক হাজার থেকে লাখখানেক শরণার্থীকে ভূমধ্যসাগর পার করে দেয়ার নামে বিভিন্ন পাচারচক্র প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে ১০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড বা প্রায় ১১ কোটি টাকা পর্যন্ত।
ব্রিটিশ এমপিদের একটি দলের পরিচালিত অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধভাবে শরণার্থী যাওয়ার সংখ্যা সম্প্রতি অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু এখন বাড়ছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার তুলনামূলক দরিদ্র দেশগুলো থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, আইনের শাসনের বালাই না থাকা লিবিয়ান উপকূলের বিপদসঙ্কুল যাত্রাপথ শিগগিরই মানব পাচারকারীদের নতুন উদ্যমে ব্যবসা শুরুর আখড়া হতে যাচ্ছে।
ইটালির সিসিলিতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যুক্তরাজ্যের কনজার্ভেটিভ মিডল ইস্ট কাউন্সিলের (সিএমইসি) হয়ে একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরি করেন ব্রিটিশ টরি এমপিরা। প্রতিবেদনে জানানো হয়, সুসংগঠিত মানবপাচার চক্রগুলো অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ইস্তাম্বুল ও দুবাই এবং সবশেষে লিবিয়ায় নিয়ে রাখে।
পাচারকারী দলগুলো প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ লাখ পাউন্ড বা ১১ কোটি টাকার মতো আয় করছে এই বর্ধিত ‘পাচার ব্যবসা’ থেকে। দিনে তারা যাত্রীতে কানায় কানায় ভরা শ’খানেক নৌকা ভূমধ্যসাগরের উদ্দেশে ছাড়ে। শুধু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মতো এশিয়ান দেশ না, নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট এবং গিনির মতো তুলনামূলক স্থিতিশীল আফ্রিকান দেশগুলোতেও মানবপাচারের এই নেটওয়ার্ক সক্রিয় আছে।
সিএমইসি’র পরিচালক, সাবেক টরি এমপি শার্লট লেসলি বলেন, ভূমধ্যসাগরে শরণার্থী সংকট বর্তমানে যুদ্ধ থেকে পালানো মানুষের মানবিক সংকটের পর্যায়ে নেই। বিষয়টি এখন আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
‘এটা এখন একটা উঠতি লাভজনক অপরাধমূলক ব্যবসা,’ বলেন লেসলি, ‘তারা বাংলাদেশের মতো অঞ্চলগুলোতে যায় ব্যবসা দাঁড় করাতে। তাদের কাছে এটা সীমাহীন একটা বাজার।’
লেসলি বলেন, নতুন ব্যবসাধারী মানবপাচারকারীদের ক্লায়েন্টরা যুদ্ধবিধ্বস্ত না। তারা শোষণ বা নির্যাতনের শিকার হয়নি। তবে যাত্রাপথে তাদের এসবের মুখে পড়তে হতেই পারে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সান জানায়, ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে মাত্র ৬৩৫ সিরীয় এবং ১৭০ লিবীয় নাগরিক সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে পৌঁছেছিল। একই সময় একইভাবে ইটালিতে আশ্রয় নেয়া নাইজেরীয় অভিবাসন প্রত্যাশী ছিল ১০ হাজার আর বাংলাদেশি ৪ হাজার ১৩৫ জন।
শুধু তাই নয়, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইটালি যাওয়া এক লাখ ৪ হাজার ৬৭০ জনের মধ্যে ৮ হাজার ৮০৭ জন ছিল বাংলাদেশি, আর ১৭ হাজার ৪৮ জন নাইজেরীয়। এর ফলে ভূমধ্যসাগর পথে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকারী অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান দ্বিতীয়।