শোকাবহ জেলহত্যা দিবস আজ
বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কময় দিন ৩ নভেম্বর – ১৯৭৫'র এ দিনে জেলখানায় বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কাণ্ডারি, চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামান। বাঁধাগ্রস্ত হয় সদ্য স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা, প্রতিক্রিয়াশীলদের আঘাতে জর্জরিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
প্রতিকূল আইনি জটিলতা পেরিয়ে দীর্ঘ প্রায় চার দশক পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিক কুশীলবরা।
পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট, সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির দাপট, ক্ষমতায় প্রতিক্রিয়াশীলরা, তারই তিন মাসের মাথায় আবারো আঘাত আসে মুক্তিযুদ্ধের কাণ্ডারিদের ওপর। ৩ নভেম্বর, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান।
কারাগারের নিরাপত্তা সেলে রাতের অন্ধকারে ঘটে এ বর্বর হত্যাকাণ্ড। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সকল আন্দোলন-সংগ্রামের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ত্বদের হত্যা করে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। যে শক্তি বাংলাদেশের জন্ম মেনে নিতে পারেনি তারাই ঘটায় এ হত্যাকাণ্ড।
জেল হত্যাকাণ্ড ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের এগিয়ে চলার ওপর উপর্যুপরি আঘাত। বিচারহীন থাকার দীর্ঘ অপেক্ষা কেটে গেলেও এখনো সেই বিভীষিকায় আপ্লুত হন শহীদ চার নেতার স্বজনেরা।
দুই দশকেরও বেশি সময় এ হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যার বিচার শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় চার দশক পর বিচার শেষ হলেও, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল তা আজও উন্মোচিত হয়নি। এজন্য কমিশন গঠনের দাবি জানান জাতীয় চার নেতার স্বজনেরা।