রাজশাহীতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের মহাসমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী কলেজ মাঠে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মহাসমাবেশ গতকাল দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও শিক্ষা সংক্রান্ত দফতরে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী। সভা পরিচালনা করেন রাজশাহী জেলা সম্পাদক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব রাজশাহী মডেল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান। ২০১০ প্রণয়নকৃত শিক্ষানীতির নির্দেশনাগুলি যথাযথভাবে অনুসরণ করলে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশ বহু দূর অগ্রসর হতে পারবে বলে তিনি জানান। একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি শিক্ষানীতিকে খণ্ডিত ও বিকৃত করে নিজ অথবা গোষ্ঠি স্বার্থ সংরক্ষণ করতে চায় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন এই সকল সমস্যা দূর করার জন্য সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় ইত্যাদি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা কর্তৃপক্ষকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু এরই মধ্যে ৪৬ টি বেসরকারি কলেজের সরকারিকরণের আদেশ জারি হয়েছে। ১২ টি মডেল কলেজও রাষ্ট্রায়ত্তকরণের তালিকায় রয়েছে। ১৪ হাজার ক্যাডার কর্মকর্তা আজ চরম উদ্বিগ্ন। ২৮৩ টি কলেজের বিশ হাজার জনবল আজ শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকরণের দোরগোড়ায়। একটি সরকারি আদেশ শিক্ষা ক্যাডারের কফিনে শেষ পেরেকটি মারতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জাতীয় শিক্ষার এত বড় সর্বনাশ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের চৌদ্দ হাজার নিবেদিত সদস্য কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন তাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই মুহূর্তে প্রতিরোধ ছাড়া বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও জাতীয় শিক্ষানীতির নির্দেশনার আলোকে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ সমূহের শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভূত রেখে তাদের সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় বিধি প্রণয়নের জন্য বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে বলে তিনি জানান। এই সময়ের মধ্যে বিধি প্রণয়ন না হলে ১৭ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি হুশিয়ারী দেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে রাখেন মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি কলেজের ইউনিট সম্পাদকগণ এনামুল, জাকারিয়া ইসলাম তালুকদার, সারওয়ার জাহান, তানভিরুল হক, নাফিজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ শওকত আলী খান। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার সম্মাদকগণও বক্তব্য প্রদান করেন। নওগাঁ জেলা সম্পাদক ইয়াকুব আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা সম্পাদক ওবায়দুল হক, জয়পুরহাট কাজী ইমরুল কায়েস সিরাজগঞ্জ মারুফ হুসাইন, নাটোর জেলা সম্পাদক এ কে এম আলমগীর, বগুড়া জেলা সম্পাদক জনাব ফারুক আহমেদ। সভা পরিচালনা করেন রাজশাহী জেলা সম্পাদক আনিসুজ্জামান মিতি। আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সচিব প্রফেসর কামরুল ইসলাম ও কেন্দ্রিয় সদস্য ড. খোন্দকার মুজাহিদুল হক। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান সরকার, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মফিজ উদ্দিন মোল্লা, প্রফেসর এ.কে.এম. মনজুর রেজা, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলরোজ আরা, এইচএসটিটিআই এর পরিচালক ড. রীনা রাণী দাস, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর আনারুল হক প্রামানিক।
প্রধান অতিথি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার জন্মলগ্ন থেকে বৈষম্যের শিকার। অতীতে যে সকল আত্তীকরণ হয়েছে তার কোনোটিই ক্যাডার কম্পোজিশন ও রিক্রুটমেন্ট রুলস সমর্থন করে। আমরা অতীতের সব অনিয়ম দূর করে শিক্ষা ক্যাডারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই। শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য- সময়মত পাঠ্যপুস্তক তৈরি ও বিতরণ, সময়মত পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, সাধারণ মানুষের জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রদান- সবই শিক্ষা ক্যাডারের অবদান। তিনি ঘোষণা দেন, শিক্ষা ক্যাডারে ১০% নিয়োগ, প্রদর্শক থেকে পদোন্নতি- সব ধরণের পার্শ্বপ্রবেশ চিরতরে বন্ধ করে একটি একক ধারা সৃষ্টি করতে হবে। আমরা সরকারের এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জনের অন্যতম কারিগর হতে চাই। আমাদের ঘরে ফেরার সুযোগ নেই। আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনের জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতি প্রফেসর হবিবুর রহমান বলেন শিক্ষা ক্যাডারে আজ নজিরবিহীন উদ্দীপনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঐক্যবদ্ধতার মেসেজ সকলকে দিতে হবে বলে তিনি জানান।