১৫৪ জন সংসদ সদস্যের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি আবার সচল হচ্ছে
মামুন সরকার/ সদরুল অাইন
১৫৪ জন সংসদ সদস্যের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি আবার সচল হচ্ছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য রিটকারীর আইনজীবীরা খুব শিগগিরই আদালতে তারিখ চাইবেন। ড. কামাল হোসেন এই রিট মামলায় মূখ্য আইনজীবী হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে। রিটকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাওয়া মাত্রই আমরা বিষয়টি আদালতে শুনানির জন্য তারিখ প্রার্থনা করব। এটাকে জুডিশিয়াল ক্যু এর দ্বিতীয় ভাগ হিসেবে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর খন্দকার আব্দুস সালাম ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হবার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনে তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ (১) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেন। রিট আবেদনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯(১) কে সংবিধানের ৬৫(২) এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করা হয়। ৬৫(২) অনুচ্ছেদে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের কথা বলা আছে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯(২) তে বলা হয়েছে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকলে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারপতি খুরশীদ আলমের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। হাইকোর্ট এই রিট আবেদন নিষ্পত্তিকালে ৫জন এমিকাস কিউরির বক্তব্য শোনেন। এরা হলেন ড. কামাল হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ব্যারিস্টার রফিকুল হক,আজমালুল হোসেন কিউসি এবং ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে এমিকাস কিউরি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তিনি ব্যক্তিগত কারণে তাঁর মতামত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্ট বিভাগ তার রিট আবেদনটি নাকচ করে দেয়। ২০১৪ সালের ১৯জুন হাইকোর্টের রায়ের পর, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। কিন্ত আপিল আবেদন করা হলেও না সরকার পক্ষ না আপিল কেউই মামলা শুনানির জন্য আপিল বিভাগে তাগাদা দেননি।
এরই মধ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলা শুনানিতে এমিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪জন এমপির নির্বাচনকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেন। ড. কামাল হোসেন তার মতামতে বলেন, ‘এই সব অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা প্রদান নিরাপদ নয়। ‘৭ জন বিচারপতির মধ্যে আপিল বিভাগের ৫জন বিচারপতি তাদের রায়ে ড. কামাল হোসেনের এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তাঁর রায়ে এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি । এই বিষয়ে মির্জা হোসেন হায়দারের রায়েও কিছু পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, মির্জা হোসেন হায়দার ছিলেন হাইকোর্টে এই রিট শুনানির জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তাই আপিল বিভাগে এটা শুনানি হলে, তিনি তা শুনতে পারবেন না।
ড. কামাল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সুত্রগুলো জানাচ্ছে, তাঁর চেম্বার এই মামলার হোমওয়ার্ক করেছে। ওই চেম্বারের একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে আপিল বিভাগ শুধু ওই সংশোধনীই বাতিল করেনি বরং এমন কিছু মন্তব্য করেছে যাতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হবে এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪জন সংসদ নির্বাচনও অবৈধ হবে।’
তাঁর মতে, এটা যদি অবৈধ হয়, তাহলে বর্তমান সংসদ আপনা আপনি বাতিল হয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতিকে তখন অস্থায়ী সরকার গঠন করতে হবে। ড. কামালের নিশ্চুপ থাকার একটি বড় কারণ সম্ভবত তিনি দেখতে চাচ্ছেন কে নতুন প্রধান বিচারপতি হন। এজন্যই তিনি বিচারপতি সিনহার পক্ষে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি অপেক্ষায় আছেন। ড. কামলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতি হলে ড. কামাল খুশি হবেন।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অপেক্ষা করছেন।, সরকার কখনো ষোড়শ সংশোধনীর বিভিউ আবেদন করে। তখনই ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা আপিলটি সচল করা হবে।