রাবির ছাত্রী হল কর্মচারির বিরুদ্ধে উত্যক্তের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের কর্মচারিদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অসদাচরণ ও ‘অশালীন মন্তব্য’ করার অভিযোগ উঠেছে। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের ফটকে দায়িত্বরত গার্ড ও হল সুপার তাদের সাথে প্রায়ই খারাপ আচরণসহ বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করেন। ছাত্রীরা বিভিন্ন সময়ে হল প্রশাসকে ওই কর্মচারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানালেও হল প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ছাত্রীদের উপর চটেন বলেও ছাত্রীদের অভিযোগ।
হলের আবাসিক ছাত্রীরা অভিযুক্ত কর্মচারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে হল প্রশাসনকে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ওই দাবিসহ ৪ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের নিকট আবেদনপত্র দিয়েছেন। আবেদনপত্রে হলের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হলের ফটকে কর্তব্যরত গার্ড মোস্তাক প্রায়ই হলের ছাত্রীদের উত্যক্ত করেন। এমনকি মোস্তাক শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। হলের ছাত্রীরা হল সুপার মোহসিনা পারভীনের বিরুদ্ধেও অসদাচরণের অভিযোগ তুলেছেন। সন্ধ্যায় কোন শিক্ষার্থী হলে দেরিতে আসলে মোহসিনা শিক্ষার্থীদের বকাঝকা ও অশালীন মন্তব্য করেন। এমনকি শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে মোহসিনা তাদের হল থেকে বের করে দেয়ারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতাম। ওই সময় আশে-পাশে কেউ না থাকায় গেটে দায়িত্বরত গার্ড মোস্তাক আমাকে প্রতিদিনই বিরক্ত করতো। এমনকি আমার পোশাক নিয়ে একদিন সে খুবই বাজে মন্তব্য করে। বাধ্য হয়ে আমি সকালে বের হওয়াই বন্ধ করে দেই। আর হলে নতুন হওয়ায় আমি কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানাতেও পারিনি।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হলের কর্মচারিরা আমদের সাথে যাচ্ছেতাই আচরণ করে। টিউশনের কারণে অনেক সময় রাতে হলে ফিরতে দেরি হলে গার্ডরা উল্টাপাল্টা কথা বলে। হল সুপার মোহসিনা ছাত্রীরা হলে দেরিতে ঢুকলে খুবই ‘বাজে মন্তব্য’ করে। হল কর্তৃপক্ষকে কর্মচারিদের বাজে আচরণের বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বললে উল্টো তারা আমাদের উপর চটে যান।
এছাড়া, ওই হলের শিক্ষার্থীরা আরো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান। শিক্ষার্থীরা জানান, হলের রিডিং রুমে বসার জন্য কোন চেয়ার-টেবিল না থাকায় তাদের মেঝেতে বসে পড়ালেখা করতে হয়। হলের পানির সমস্যা নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। পানির সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কাজ সারতে বেগ পেতে হয়। হলের শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না। হলের ডাইনিং চলছে মাত্র তিনজন কর্মচারি দিয়ে।
এদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় হলের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সমাধান চেয়ে আন্দোলন শুরু করলে হল প্রাধ্যক্ষ ফাহিমা খাতুন হলে এসে তাদের সাথে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও হলের সমস্যাগুলো শুনে তা সমাধানে সাত দিন সময় চেয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনেছি। হলের প্রাধ্যক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
অভিযুক্ত হল সুপার মোহসিনা পারভীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। অভিযোগগুলো ষড়যন্ত্রমূলক ও ভিত্তিহীন। হল থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয় আমি সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। কেউ দেরিতে আসলে খাতায় স্বাক্ষর করে হলে ঢুকতে দেয়া হয়। কাউকে হয়রানী করা হয় না।’
এ বিষয়ে গার্ড মোস্তাকের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘আমি হলে গিয়ে ছাত্রীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগ শুনেছি। আমাদের হলটি নতুন। তাই আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’