আসেম সম্মেলন: রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কিছু বলেননি সু চি
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে আজ-সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এশিয়া-ইউরোপ মিটিং বা আসেম সম্মেলন।
বাংলাদেশ, জার্মানি, জাপান, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সম্মেলনে ইউরোপ-এশিয়ার ৫৩ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
দুই দিনের ১৩তম এ সম্মেলনে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে সম্মেলনের শুরুতে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি তার বক্তব্যে মিয়ানমারের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরলেও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।
এর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সুচির সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের প্রস্তাব দিলে সু চি ইতিবাচক মনোভাব দেখান।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে শুরু হয়েছে এশিয়া-ইউরোপ মিটিং বা আসেম সম্মেলন।
দুদিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এশিয়ার শক্তিধর দুটো দেশ চীন ও ভারত এবং ইইউ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন।
এবারের সম্মেলনে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা এবং দুই মহাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
আলোচ্য সূচিতে না থাকলেও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত রোহিঙ্গা সংকটও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। তাই আসেম মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য।
সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি— তবে তার এ বক্তব্যে মিয়ানমারের বিভিন্ন বিষয় উঠে এলেও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি বাদ দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্মেলনের ফাঁকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবে বাংলাদেশও।
সম্মেলন শুরুর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ফেডেরিকা মোঘেরিনি আশা প্রকাশ করেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহিংসতা বন্ধ, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ বজায় রেখে সংকটের বাস্তবায়নযোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে উৎসাহিত করা এবং এর দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান খুঁজে বের করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। মিয়ানমার সফরে গিয়ে সুচির সঙ্গে বৈঠকে শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ সময় মিয়ানমার চীনের এসব প্রস্তাব বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন সু চি।
সম্মেলনে যাওয়ার আগে চীন, জাপান ও ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে গেছেন।
এই পরিস্থিতিতে আসেম সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে কতোটা অগ্রগতি হতে পারে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সৈয়দা রোজানা রশীদ, বলেন সংকট সমাধানের জন্য এটা একটা শুরু হতে পারে। কারণ এশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলো সবাই দেখে গেছে পরিস্থিতি ফলে রোহিঙ্গা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
অর্থাৎ সম্মেলনে এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা বিভিন্নভাবেই উঠবে বলে আশা করা যায়।
সৈয়দা রোজানা রশীদ বলেন, এখানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোকে ব্যবহার করার একটা সুযোগ পাবে, আর সেই সুযোগটা বাংলাদেশ নিতে পারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে। এটা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে একটা শুরু হতে পারে।
যদিও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করছেন, এ সম্মেলনে সমাধানের সুযোগ কতটা তৈরি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এদিকে, চীন এবং মিয়ানমারের মধ্যে যে কৌশলগত সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব, এর মধ্য থেকেই বিষয়টিকে বের করে নিয়ে আসার একটি উপায় বাংলাদেশকে বের করতে হবে।
এখানে ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, সেটি কাজে লাগাতে হবে। সেই সাথে দুই পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক কোনো একটি অবস্থা করে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো সবসময়ই এক ধরণের দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকে।
একদিকে, তারা যেমন মানবাধিকারের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন অর্থাৎ রোহিঙ্গা ইস্যুর মানবিক সংকটের দিকটি নিয়ে কথা বলছে তারা, আবার অন্যদিকে তারা মাইগ্রেশন ইস্যুটাকে সিকিউরেটাইজ করে ফেলেছে। এর সঙ্গে তাদের নিজেদের জটিল রাজনৈতিক বিষয়ও আছে।
দেখা যাবে, রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোন দেশে নেয়ার ব্যবস্থা হয়ত হবে না। ফলে সকলেই হয়ত বলবে, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের প্রতিপালন করার কাজটি চালিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে হয়ত খরচ চালিয়ে যাবার জন্য সাহায্য দেবে তারা।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটা সবারই ভাবনায় আছে যে, বাংলাদেশ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে সবারই অসুবিধা।
আঞ্চলিক এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে সেই বিষয়টি মাথায় রাখবে সবাই।
কিন্তু যেহেতু ইইউ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকে সবখানে ফলে তারা সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে।
আগস্টের ২৫ তারিখের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সূত্র বিবিসি বাংলা।