রাজশাহী-১ আসনে ‘সেভেন স্টার’ চ্যালেঞ্জে ফারুক চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে গত ১৮ নভেম্বর রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী এক জায়গায় জড়ো হয়ে মতবিনিময় করেন। গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে এ মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। ওই মতবিনিময় সভায় সাতজন আওয়ামী লীগ নেতা এ আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে এই সাতজনের মধ্যে যোগ্য একজনকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলে সবাই নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুইবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিপক্ষে একটি শক্তিশালী অংশের এই ঘোষণা বর্তমানে রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচনার ঝড় তুলেছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে এই ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সাংসদ ফারুক চৌধুরীকে।
তবে কেউ বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সুবিধা বঞ্চিত নেতারা এক জায়গায় হয়ে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা শক্ত অবস্থানে থাকবেন।
আবার কেউ বলছেন, শেষ সময়ে সুযোগ সুবিধা নিতে ওমর ফারুক চৌধুরীকে চাপে রাখতে এ কৌশল নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। যারা নিজেরাও মনে করেন আগামী নির্বাচনে এ আসনে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিকল্প নেয়।
রাজশাহীর ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। ফলে এ আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসেবেও পরিচিত। তবে সেই ঘাটিতে ছোবল মেরে ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। এর পুরস্কার হিসেবে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় বারেরমত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধুরী। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে এবার তাকে মোকাবেলা করতে হবে ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়া এ আসনে এবার দলের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা হলেন, দলের জাতীয় কমিটির সদস্য ও গোদাগাড়ী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান একেএম আতাউর রহমান খান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব বদরুজ্জামান রবু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. মো. মকবুল হোসন খান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু, জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. আব্দুল ওহ্হাব জেমস। এদের মধ্যে আগে থেকে মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন মতিউর রহমান ও গোলাম রাব্বানি।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। তবে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন, খারাপ আচরণ ও জামায়াত প্রীতির অভিযোগ রয়েছে। যা দলের হাই কমান্ডও অবগত। ফলে এবার তিনি মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। এ কারণে এবার তিনি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান মেয়র বাবু।
তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী হিসাবে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিকল্প নেয়। তিনি তানোর গোদাগাড়ী মানুষের অন্তরের মধ্যে মিশে গেছেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এ আসনে এভাবে মাঠে কাজ করেনি। তানোর গোদাগাড়ীতে ওমর ফারুক চৌধুরী পরিশ্রম করে আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্ত করেছে। এলাকার উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে মোকাবেলা করতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিকল্প নেয়’ বলে জানান তিনি।
তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। মনোনয়ন প্রত্যাশা করা দোষের কিছু নয়। দল সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করে মনোনয়ন চুড়ান্ত করবেন। দল আমাকে ছাড়া যদি অন্য কাউকে এ আসনে মনোনয়ন দেয় আমি তার পক্ষে কাজ করবো। দলের বাইরে আমি নই। তবে এখন স্থানীয় এমপির সঙ্গে তেমন কোনো নেতাকর্মী নাই’ বলেও দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার মনে-প্রাণ জুড়ে থাকে আওয়ামী লীগ। আর সে কারণে জোট সরকারের আমলে আমাকে চাকরি হারাতে হয়েছে। এরপর থেকে আমি মনোনিবেশ করেছি রাজনীতিতে। দলের কেন্দ্র থেকে মনোনিত হয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচনে রাজশাহীর নির্বাচনী কর্মকান্ড আমি নিজে তত্বাবধান করেছি। আশা করি আগামীতে আমার প্রতি আস্থা রেখেই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’