না ফেরার দেশে খ্যাতিমান লোকসংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকী
বারী সিদ্দিকী একাধারে খ্যাতিমান লোকসংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক ছিলেন—জনপ্রিয় এ লোকসংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকী আর নেই। গতরাত ২টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে দ্বিতীয় জানাজা শেষে জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকীর মরদেহ নেয়া হয় নেত্রকোনায়।
বাদ আসর নেত্রকোনা সরকারি কলেজে এই সংগীতশিল্পীর তৃতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত শেষে কারলি গ্রামের বাউলবাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। রাতেই বারি সিদ্দিকীর মরদেহ মোহাম্মদপুরে আনজুমানে মুফিদুল ইসলামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সকালে ধানমণ্ডির বাসায় নিয়ে আসা হয়। তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। পরে দ্বিতীয় জানাজা হয় সকাল সাড়ে ১০ টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে। বাদ আসর নেত্রকোনা সরকারি কলেজে হয় তৃতীয় ও শেষ জানাজা।
শৈশবেই গান শেখার হাতেখড়ি। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাননি শিল্পী আবদুল বারি সিদ্দিকী। কিশোর বয়সে নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নেন। পরে দেশ-বিদেশের একাধিক ওস্তাদের কাছে প্রশিক্ষণ নেন সংগীতের বিভিন্ন শাখায়। মূলত লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক গানের জন্য গত শতকে জনপ্রিয় একাধিক গানে শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গান এনেছে ভিন্ন মাত্রা।
বারী সিদ্দিকী একাধারে খ্যাতিমান লোকসংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক। মূলত গত শতকের শেষ দিকে তিনি সারাদেশে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যান কথাসাহিত্যিতক হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরে। পান তুখোড় জনপ্রিয়তা।
চলচ্চিত্রের প্লে ব্যাকে তার দরদী কণ্ঠের বেশ কিছু আবেগমাখা গান ছড়িয়ে যায় সারা বিশ্বে। তার জনপ্রিয় হওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, পূবালি বাতাসে, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর ভাটি অঞ্চলের জেলা নেত্রকোণায় জন্ম আবদুল বারি সিদ্দিকীর। শৈশব থেকেই তার গান শেখার হাতেখড়ি। কিশোর বয়সে নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন তিনি। পরে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নাপাল ঘোষসহ বহু গুণীশিল্পীর সান্নিধ্য পান। ওস্তাদ আমিনুর রহমানের কাছে প্রশিক্ষণ নেন ছয় বছর ধরে।
সত্তরের দশকে নেত্রকোণা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। এক সময় বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং উচ্চাঙ্গ বংশীবাদনের প্রশিক্ষণ নেন।
নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন বারী। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন। তিনি নিজেও বেশকিছু গান লিখে সুর করে নিজেই তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন