রাজশাহীর গণকবরগুলো বেদখল
রাজশাহীর বেশ কিছু গণকবর বেদখল হয়ে গেছে। এ নিয়ে নজরদারি নেই জেলা প্রশাসনের। নেই তালিকাও। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সতায়তায় দখলদাররা দখলে রেখেছে গণকবরগুলো। বারবার ধর্ণা দিয়েও গণকবরগুলো সংরক্ষণে গড়িমসিরও অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসাকের দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলায় গণকবর রয়েছে ছয়টি। এছাড়া একটি বধ্যভূমি রয়েছে। তবে এ তালিকা অনেক আগের। বছরপাঁচেক আগে উপজেলাভিত্তিক গণকবর ও বধ্যভূমির তালিকা তৈরি করেছিল জেলা প্রশাসন। মন্ত্রণালয়ের চাহিদামাফিক ওই তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়েই পাঠানো হয়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গিয়ে মেলেনি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য। তবে সর্বশেষ ফাইলটি জুডিশিয়াল মুন্সিখানা শাখায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেখানে গিয়েও মেলেনি তথ্য। পরে পাঠিয়ে দেয়া হয় সাধারণ শাখায়।
সাধারণ শাখার প্রধান সহকারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অনেক আগেই তারা ওই ফাইল তৈরি করে জুডিশিয়াল মুন্সিখানা শাখায় পাঠিয়েছেন। এরপর তা আর ফেরেনি। এ সংক্রান্ত কোনো নথিই নেই তাদের কাছে।
এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও সাক্ষাত মেলেনি জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিনের। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সালাহউদ্দিন বলেন, রাজশাহীতে এমন তালিকা হয়েছে কী-না তার জানা নেই। তবে অন্যান্য জেলায় এ তালিকা হয়েছে। তালিকা হয়ে থাকলে তা সাধারণ শাখায় থাকার কথা বলে জানান তিনি।
এই কর্মকর্তা বলেন, গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এগুলোর কিছু কিছু গেজেটভুক্ত। আবার কিছু কিছু চিহ্নিত হলেও গেজেটভুক্ত হয়নি। বেশ কিছু এখনো চিহ্নিতই হয়নি। আবার কিছু কিছু গণকবর নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ এখন বেদখল। এগুলোর সংরক্ষণ ও চিহ্নিতকরণ কাজও রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে।
এদিকে জেলার উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তানোরে দুটি, গোদাগাড়ীতে তিনটি, পবায় চারটি, মোহনপুরে দুটি, বাগমারায় দুটি এবং দুর্গাপুরে দুটি এবং বাঘায় দুটি গণকবর রয়েছে। তবে অধিকাংশই গণকবর বেদখল। কিছু কিছু চিহ্নিত হলেও পড়ে রয়েছে অযত্নে। বাকিগুলোয় চিহ্নমাত্র নেই।
জেলার তানোর উপজেলা কামারগাঁ ও তালন্দ তাকিয়ালপাড়া গণকবর এখনো বেদখল। নাম প্রকাশ না করে এখানকার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, কামারগাঁ গণকবরের জায়গা বিরেন দাস নিজের মানে রেকর্ড করে নিয়েছেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলেরাই এখন তা দখলে রেখেছেন। একই অবস্থা তাকিয়ালপাড়া গণকবরেরও।
বিপুল সম্পতি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজসে দখলে রেখেছেন দখলদাররা। কয়েক বছর আগে এসব জায়গা উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সোচ্চার হওয়ায় তাদের উপরেও আঘাত আসে। এরপর থেকে তারাও নীরব।
বাড়ি ঘর তৈরি হয়েছে বাগমারার মোহনগঞ্জ ও তাহেরপুর গণকবরের উপরে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহার আলীর ভাষ্য, এখন দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই এখানে গণকবর রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল গণকবর দুটি পরিদর্শন করে গেছেন। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় থমকে গেছে উচ্ছেদ।
দখলমুক্তি থাকলেও স্মৃতি চিহ্ন নেই জেলার মোহনপুরের সাঁকোয়া গণকবরের। এ উপজেলার মুগরইল গণকবরটিতে রয়েছে নামমান্ত্র স্মৃতি চিহ্ন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, বারবার বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও মেলেনি এসব গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ। তিনি বলেন, কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার আব্দুল ওয়াহেদ এ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে গণহত্যা চালিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী নওগাঁর মান্দায় অবস্থান নেন। সেখানকার প্রসাদপুর মাদ্রাসার সুপার পদে রয়েছেন এ রাকাজার। এ নিয়ে ২০০৮ সালে মামলা হয় তার নামে। তারা শুনেছেন আব্দুল ওয়াহেদ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। এর আগে থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
রাজশাহী নগরীর গণকবরগুলোর একটি বাবলাবন গণকবর। ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদসহ ১৭ জন লোককে তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানীরা। ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় জনতা নগরীর বোয়ালিয়া ক্লাবের নিকটে একটি গণকবর আবিষ্কার করেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমসহ ১৭ জনের মরদেহ।
অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমের কন্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহাবুবা কানিজ কেয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ১৯৭১ সালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা চালিয়েছে। ২৫ নভেম্বর রাতে এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় তার বাবাকেও ধরে নিয়ে যা পাকিস্তানীরা। সেই দিনের সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে তাদের। এ গণহত্যার বিচার চান তিনি। এছাড়া এ গণকবর সংরক্ষণেরও দাবি জানান।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. সুকুমার বিশ্বাস ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে একাত্তরের বধ্যভূমি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বয়ান তুলে ধরেন তার ‘একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর’ গ্রন্থে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালে পুরো রাজশাহী বিভাগ জুড়েই পাকবাহিনী নারকীয় হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন এর মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে একটি বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমি পাকবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগী আলবদর-রাজাকারদের সৃষ্ট। বোয়ালিয়া থানার ২৫ গজ দূরে ঠিকাদার মুসলিম শাহ’র দ্বিতল বাড়ির পেছনে রয়েছে এই বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম শাহ সপরিবারে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। এই সুযোগে তার বিরাট বাড়িটি আলবদররা দখলে নিয়ে সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে অসংখ্য নারী-পুরুষকে ধরে এনে এই ক্যাম্পে নির্যাতন চালায় আলবদররা। নির্যাতন-ধর্ষণের পর ক্যাম্পের পেছনে দেয়াল ঘেরা জঙ্গলে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হতো তাদের।
পাকসেনারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলকে প্রায় গোটা ৯ মাস ক্যান্টনমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করেছিল। এই হলের পেছনে দীর্ঘ এক বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ছিল বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমিতে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে পাকসেনা ও তাদের দোসররা নিয়ে হত্যা করতো। এই ছাত্রাবাস থেকে আধা মাইল দূরে পূর্বকোণে ১৯৭২ সালের ২৩শে এপ্রিল আবিষ্কৃত হয় একটি গণকবর। এ সময় এই এলাকাটিতে ইট কাটার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গণকবর আছে এই সংবাদে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম এবং কন্ট্রাক্টর জেবর মিয়ার নেতৃত্বে সমাধি এলাকাটি খনন করা হয়। খননের ফলে বেরিয়ে আসে মাথার খুলি, নরকংকাল।
এই কবর থেকেই পাঁচটি ঘড়ি, পাঁচটি কলম, দুটি টুপি, এক ও ১০ টাকার নোট মিলিয়ে মোট ৩০০ টাকা, একটি চাবির রিং, দুটি সাইকেলের চাবি, দুটি কানের দুল, তিনটি সিগারেট লাইটার, একটি মানিব্যাগ, একটি কাজলের টিউব, ওড়না, পাথর বসানো আংটি, চিরুনি, নারীদের কার্ডিগান, জুতা ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।
২০১১ সালে গোদাগাড়ী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নতুন ভবনের ভিত খননের সময় গণকবরের সন্ধান মেলে। মাটির নিচ থেকে উঠে আসতে থাকে শহীদদের মাথার খুলি ও শরীরের নানা অংশের হাড়। এলাকার প্রবীণরা সাক্ষ্য দেন, একাত্তরে এই স্থানটিতে বহু মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়। কিন্তু এরপরেও গণকবরটি সংরক্ষণ করা হয়নি। গণকবরের ওপরেই নির্মিত হয়েছে স্কুল ভবন।
পার্শ্ববর্তী মোহনপুর গ্রামের জনগণ জানিয়েছিলেন- ৭১ এর ৫ ও ৬ মে হানাদাররা ট্রাক ও জিপে করে এসব হতভাগ্য নারী-পুরুষকে এখানে নিয়ে এসে হত্যা করে। প্রতিদিনই অগণিত নারী-পুরুষকে হাত বাঁধা অবস্থায় জোহা হলের এই বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হতো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশে নরকংকাল ভর্তি বহু গর্তের সন্ধান পাওয়া গেছে।দৈনিক আজাদ প্রতিনিধি ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবু সাঈদের লাশও এখানকার একটি গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়। সাংবাদিক মোহাম্মদ আবু সাঈদসহ ২৮ জনকে পাকিস্তানি দালালরা ধরে নিয়ে যায়। সাঈদকে প্রথমে সার্কিট হাউসে এবং সেখান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের বাড়িতে নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আটক রাখা হয়। এসময় তার ওপর অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়।
এরপর ৫ জুলাই অপর ১৫ জনের সঙ্গে সাঈদকেও জোহা হলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের সামনেই দিনাজপুরের জনৈক রেলওয়ে কর্মচারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সাঈদসহ ১৫ জনের এই বন্দী দলটিকে বাধ্য করা হয় মৃতদেহটি রেলওয়ে স্টেশনের দিকে বয়ে নিয়ে যেতে। স্টেশনের পাশেই একটি বাবলা গাছে নিচে তাদের সামনেই গর্ত করা হলো। সবাইকে জোর করে গর্তের মধ্যে ফেলে দিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খোঁচানো শুরু হলো এবং একই সাথে তাদের ওপর মাটিচাপা দেয়া শুরু হয়।
আর এভাবেই অর্ধমৃত মানুষ গুলোকে মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। তবে এই গর্ত থেকে পিওন আবদুল কাদের এবং শ্যামপুরের রূপভান মিয়া পরস্পরের সাহায্যে এই মৃত্যুকূপ থেকে উঠে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর এরাই এই লোমহর্ষক করুণ কাহিনীর কথা জানিয়েছিলেন।
ওই গ্রন্থে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭২ সালে গগণবাড়িয়া ও যুগীশো গ্রামে আবিষ্কৃত হয় গণকবর আর বধ্যভূমি। গণকবর দুটির মধ্যে গগনবাড়িয়ার গণকবর ছিল বিস্ত্রীর্ণ এলাকাজুড়ে। এখানকার বধ্যভূমি থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী জেলে সে সময়ের হত্যাযজ্ঞের যে বিবরণ দিয়েছেন তা যেমন ভয়াবহ তেমনি বেদনাদায়ক।
পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ হবে। দফায় দফায় ধরে আনা হলো গগনবাড়িয়ার মানুষদের। হয়তো অন্য গ্রামেরও মানুষ ছিল। প্রায় ৫০০ লোককে দাঁড় করানো হলো সারিবদ্ধ ভাবে। রাত ছিল আঁধার। হঠাৎ করেই আমাদের ওপর চালানো হলো গুলি। প্রায় পাঁচশো লোকের আর্তচিৎকারে গগনবাড়িয়া প্রকম্পিত হলো! মৃত্যু যন্ত্রণায় তখনও কেউ কেউ কাতরাচ্ছিল। কিন্তু রেহাই পেল না তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব নিস্তব্ধ নিথর হয়ে গেল। তারপর সবাইকে গণকবর দেয়া হলো সেখানে।
গগনবাড়িয়ার গণহত্যার ঘটনায় নির্মিত শহীদ মিনারে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনার দখল করে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি কলা চাষ করছেন। মিনারের প্রাচীরের ওপর মাচা তৈরি করে সেখানে শিম চাষ করা হচ্ছে। আর প্রাচীর ঘেঁষেই শহীদ আব্দুল করিম সরদারের কবরের পাশে গরু গোয়াল বানানো হয়েছে।
একাত্তরের মে মাস। পাক হানাদার বাহিনী যুগীশো গ্রামে এসে ফরমান জারি করলো শান্তি গঠন করা হবে, সবাইকে আসতে হবে। একে একে ২৭ জন গ্রামবাসী হাজির হলো। আর কাউকে না পেয়ে পাক সেনারা ২৭ জনকেই সারিবদ্ধভাবে পেছনে হাত রেখে দাঁড়াবার হুকুম দিল। সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালো। আর তারপরই ঝাঁক ঝাঁক ঘুলি এসে পড়লো তাদের ওপর। মাত্র কিছুক্ষণ্ তারপরই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নামক প্রাণী ধ্বংস নিষ্প্রাণ হয়ে গেল সবাই। এখানেই শেষ নয়, গ্রামে চালানো হলো অকথ্য নির্যাতন-ধ্বংস। ৫৫ জন মহিলা নির্যাতিতা হলেন পাক দস্যুদের হাতে।
রাজশাহী উপশহরে সপুরা কলোনী। এই এলাকায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিনি ক্যান্টনমেন্ট। তবে বেশ সুরক্ষিত। রাজশাহী সদরের এসডিও, পবা থানার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক দল ও অন্যরা মিলে গোটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় খনন কাজ চালিয়ে একশটি গণকবরের সন্ধান পান। এই একশটি গণকবর থেকে দশ হাজার মানুষের কংকাল উদ্ধার করা হয়। এই ভয়াবহ দৃশ্যে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সেদিন এই সংবাদে অশ্রুসজল নয়নে মানুষের ঢল নেমেছিলো, কাফেলা ছুটছিল গণকবরগুলোর দিকে।