মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থীসহ ব্যবসায়ীদের সন্তানদের অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনায় তৎপর একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
মোঃলিটন মাহমুদ মুন্সীগন্জ থেকে
মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থীসহ ব্যবসায়ীদের সন্তানদের অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনায় তৎপর একটি সংঘবদ্ধ চক্র। গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে চক্রটি ৫টি অপহরণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় অপহরণ আতঙ্কে ভুগছে মুন্সীগঞ্জবাসী। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর কলেজ শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় মামলায় তিন অপহরণকারী গ্রেফতার হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের খালইষ্ট এলাকা থেকে জয় ও বাবু নামের দুই অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ২০ নভেম্বর রাতে শহরের দক্ষিণ কোটগাঁও এলাকা থেকে মমিন নামের এক অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. হেদায়েতুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, কলেজ শিক্ষার্থী অপহরণ মামলার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দাখিল করা রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে আসামিদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সদর থানার এসআই মো. সাচ্চু মিয়া সমকালকে জানান, গ্রেফতাররা কলেজ শিক্ষার্থী ছাড়াও আরও অপহরণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি-না রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পুলিশ ও অপহূতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহে বাড়ি হলেও মুন্সীগঞ্জে ভাড়া বাসায় থেকে আবু রাহাত মিশু সরকারি হরগঙ্গা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করছিলেন। এর মধ্যে গত ২০ নভেম্বর দুপুরে সংঘবদ্ধ চক্রটি রাহাতকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এতে কলেজ শিক্ষার্থীর বৃদ্ধা মা ময়মনসিংহ থেকে বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠালে শিক্ষার্থী আবু রাহাত মিশুকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। এ খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএমের নির্দেশে ওই দিন রাতেই মো. মমিন নামের এক অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী আবু রাহাত বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে রুজু করা অপহরণ মামলায় বৃহস্পতিবার খালইষ্ট এলাকা থেকে বাবু ও জয়কে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবা শাহীন রেজা কাজল সমকালকে জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর শহরের খালইষ্ট এলাকায় তার ছেলে মাহিনসহ অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে আটকের পর অপহরণচেষ্টার সঙ্গে গ্রেফতার বাবু ও জয় জড়িত। অপহরণচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন ও থানায় জিডি করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে পুলিশের এক এএসআই যুক্ত থাকায় তাকে কর্মস্থল থেকে ক্লোজড এবং অপর দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত দুই মাসেও মামলা নথিভুক্ত না করা এবং বাবু ও জয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা কলেজ শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের সাহস পায়।
শাহীন রেজা কাজল আরও জানান, এ চক্রটি আরও দুটি অপহরণের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে শহরের ইদ্রাকপুর এলাকার বলহরি নামের এক ব্যবসায়ীর ছেলে রণজিতকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা হয়। একই এলাকার নিরঞ্জন দাসের ছেলে অন্তরকে অপহরণের পর সোনারগাঁ থানা থেকে উদ্ধার করা হয়।
কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, অপহরণ ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত যেসব শিক্ষার্থী ছাত্রাবাস ও ভাড়া বাসায় থেকে মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজে অধ্যয়নরত, তাদের মধ্যে এখন অপহরণ আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিভাবকরাও রয়েছেন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। শহরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার তিন অপহরণকারীসহ এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থীসহ ব্যবসায়ীদের সন্তানদের অপহরণের পর আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।