রাজশাহী সদর নিয়ে আ.লীগ জোটে ঠান্ডা লড়াই

বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য বিশ্বের এক নম্বরের খেতাব প্রাপ্ত শহর নিয়ে গঠিত রাজশাহী-২ (সদর) আসন। পদ্মা পাড়ে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যের এই নগরী নিয়ে ২০০৮ সালে এ সংসদীয় আসন গঠিত হয়। এর আগে রাজশাহী-২ আসনটি ছিল সিটি করপোরেশন ও পবা উপজেলা নিয়ে।

১৯৯১ সালের পর বিএনপির ঘাটি হিসেবে খ্যাত রাজশাহী সদর আসনে প্রথম নৌকার জয় হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে সাংসদ নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এক সময়ের রাজশাহী কাঁপানো তুখোড় ছাত্র নেতা বাদশা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগত হলে আবারো নৌকা প্রতীক তিনিই পাবেন। তবে এ আসনে এবার মনোনয়ন নিয়ে আগাম শুরু হয়েছে ১৪ দলীয় জোটের ঠান্ডা লড়াই।

রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এ আসনে জোটের শরীকদের ছাড় দিতে রাজি নন নগর আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ। তারা চাইছেন আওয়ামী লীগ থেকে এবার প্রার্থী দিতে। ইতোমধ্যেই তাদের এ দাবি দলের হাই কমান্ডেও তুলে ধরা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজ দল থেকে প্রার্থী দিলে মনোনয়ন চাওয়ার তালিকায় থাকবে পারে অন্তত হাফ ডজন খানেক নেতার নাম।

এদের মধ্যে রয়েছেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, মাহাফুজুল আলম লোটন, নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী, নগর আওয়ামী লেিগর সদস্য আহসানুল হক পিন্টু। সে ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা ও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন রাজশাহী নগরের উদিয়মান তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত ডাবলু সরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা জানান, কোন কারণে বিএনপি ভোটে না আসলে একাদশ নির্বাচন জোটগত হওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জোটের শরীকদের নিজ নিজ দল থেকে নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়া জোটগত নির্বাচন হলে আবারো নৌকা প্রতীক পাবেন ফজলে হোসেন বাদশা।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, আগামী নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনে নৌকা প্রতীক যে পাবেন আমরা তাঁর হেয়ই কাজ করবো। এর বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেয়। তবে গত দুইবার রাজশাহী সদর আসনে মহাজোটের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অনেক ক্ষতি হয়েছে। বঞ্চিত হয়েচেন দলের নেতাকর্মীরা। তাই এবার এই আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে আমরা কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছি। দল যেটি ভালো মনে করবে আমরা সেটি মেনে নিব। তবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়া হলে আমি মনোনয়ন চাইবো। এ জন্য প্রস্তুতিও রেখেছি বলে জানান এই তরুণ নেতা।

নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, গত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারো আওয়ামী লীগ থোক প্রার্থী দেয়া হলে মনোনয়ন চাইবো।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় শহর হিসেবে এখানে দলীয় প্রার্থী দিলে নেতাকর্মীরা মনের দিক থেকে আরও চাঙ্গা হবে। দলীয় প্রার্থী না পেলে আগামিতে দলের জন্য খারাপও হতে পারে। তাই এই গুরুত্বপূর্ন আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

আহসানুল হক পিন্টু বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এভাবেই রাজনীতি করতে চাই। দল সুযোগ দিলে আগামীতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। তবে এবার এখানে দলীয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এর কোনো বিকল্প নাই।

আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মীর ইকবাল বলেন, ‘এখন এই শহরে আমাদের দলীয় এমপি নাই, মেয়রও নাই। আমাদের কথা বলার মতো কেউ নাই। আমাদের দলীয় এমপি না থাকায় বিভাগীয় এই শহরের উন্নয়নও থমকে আছে। জোট থেকে যিনি এমপি হয়েছেন, তিনি আমাদের দলীয় কার্যালয়ে আসেন না, বসেনও না। আমাদের বিপদে আপদে পাশে থাকেন না। আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হলে দলীয় প্রার্থী লাগবে। সেই হিসেবে এবার দলের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন চাইবো আমি। এর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি।’

মীর ইকবাল বলেন, ‘প্রার্থী হিসেবে নিজে সব সময় মাঠে আছেন উল্লেখ করে মীর ইকবাল বলেন, ‘নগরীর সবগুলো ওয়ার্ডে যাচ্ছি। গণসংযোগ করছি। আগামীতে আওয়ামী লীগের মেয়র এবং এমপি হলে নগরীর উন্নয়ন কাজ সহজ হবে।’