ভাই গিরিশচন্দ্র সেন: ক্ষণজন্মা পুরুষের পথ চলা শীর্ষক স্মৃতিবক্তৃতা সম্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : এদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবন এবং কাজ সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে যাতে তাঁরা একটি গর্বিতজাতির অংশ হিসেবে নিজেকে বিবেচনা করতে পারে, বলেছেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ২৭ নভেম্বর সোমবার বিকাল ৩টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘ভাই গিরিশচন্দ্র সেন : ক্ষণজন্মা পুরুষের পথ চলা’ শীর্ষক স্মৃতিবক্তৃতার আয়োজন করে। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। অনুষ্ঠানে স্মৃতিবক্তৃতা প্রদান করেন ড. মোহাম্মদ আলী খান। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। তিনি আরো বলেন, জাদুঘর তার ইনট্রানজিবল হেরিটেজ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের জীবন নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের মূলবক্তা বিশিষ্ট গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী খান ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের জন্ম, বেড়ে উঠা, লেখা পড়া এবং লেখা-লেখির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, গিরিশচন্দ্র সেন ছিলেন সাদামাটা অথচ একজন বর্ণিল মানুষ। ১৮৩৪ সালে যার জন্ম বতমান নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে। তার পিতা মাধব রাম সেন (রায়) এবং মাতা জয়কালী দেবী। আট বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হয় । ৭৪ বছরের জীবনে পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের অনুবাদ শুধু করেননি তিনি অসংখ্য গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন এবং অসংখ্য মৌখিক গ্রন্থের তিনি রচয়িতা। অনুবাদক হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে তিনি কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় করেছেন। ১৮৭৬ সালে আরবি ভাষা শেখার জন্য তিনি লখনো যান। মৌলভী এহসান আলীর অধীনে আরবী ও আরবী ব্যাকরণ ও দিওয়ান-ই-হাফিজ শেখেন। পরবর্তীতে ঢাকা ফিরে নলগোলার মৌলভী আলীম উদ্দীন সাহেবের কাছে আরবী সাহিত্য ও আরবী ইতিহাস চর্চা করেন। ১৮৮২ থেকে ১৮৮৬ এই পাঁচ বছর দীঘ পরিশ্রমের পর তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ বাংলায় অনুবাদে সক্ষম হয়। এজন্য তিনি আজ একজন প-িত হিসেবে সকলের কাছে সমাদৃত। সম্মানিত অতিথি হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, গুণী মানুষের কাছে রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম বড় নয় তার কাছে সবথেকে বড় কাজ এজন্য গিরিশচন্দ্র সেন একজন বড় মানুষ। প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভারত উপমহাদেশে যে কজন চিন্তক নিজ কাজের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ভাই গিরিশচন্দ্র সেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি শুধু একজন অনুবাদক হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেননি, সমাজ পরিবতনে গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করেছে। সভাপতির ভাষণে বিশিষ্ট চিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের মত কিছু ক্ষণজন্মা মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল রাষ্ট্রের চিন্তা করেছিলেন। এজন্য ওই সময়ে বাংলার রেনেসাঁ বললেও ভুল হবে না।