ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে বিপাকে হিমাগার মালিকরা
রনি আকন্দ কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের কালাইয়ে আলুর বাজারে ধসের কারণে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরা। এতে হিমাগার মালিকদের অন্ত্মত ১৫ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে। এদিকে সংরক্ষিত আলুর বিপরীতে নেয়া ঋণের টাকা ও হিমাগার ভাড়ার চেয়ে বাজার দর কম হওয়ায় ঋণ শোধের ভয়ে পলাতক রয়েছেন আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।
হিমাগার মালিকদের দাবি, অধিক লাভের আশায় ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মাঝে বস্ত্মাপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ১৬ শতাংশ সুদ হারে বিতরণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ব্যাপকহারে আলুর দর পতনের কারণে হিমাগার থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধের ভয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হিমাগার মালিকদের অন্ত্মত ১৫ কোটি লোকসান গুণতে হবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, আলু সংরক্ষণের জন্য এ উপজেলায় ১১টি হিমাগার আছে। এসব হিমাগারে অন্ত্মত ১৫ লাখ বস্ত্মা আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব।এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারে উৎপাদন মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়। আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় সে সময় আলু বাজারে বিক্রি না করে এলাকার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সেগুলো সংরক্ষণ করে। আবার আলু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিজেদের মূলধন ছাড়াও হিমাগারে সংরক্ষিত তাদের আলুর বিপরীতে মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করে অতিরিক্ত আরও আলু কিনে তা এলাকার বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করেছেন। ফলে এ এলাকার হিমাগারগুলোতে গত বছরের তুলনায় এবার আলুর সংরক্ষণও বাড়ে। এর প্রভাবে চলতি মৌসুমে হিমাগারগুলোতে আলুর দাম কমে এবং আনলোডের (খালাস) পরিমাণও কম হয়।
সুদের টাকা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে হিমাগার মালিকরা আলু চাষী ও ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে হিমাগারে অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে এখন না পারছেন আলু আনলোড করাতে; না পারছেন ভাড়া, ঋণ ও সুদের টাকা আদায় করতে। আলুর চরম মূল্য পতনের কারণে হিমাগারগুলোতে বর্তমানে কৃষক ও ব্যবসায়ীর উপস্থিতি নাই বললেই চলে।
উপজেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরে এ সময়ে প্রতিটি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণকৃত আলুর বস্ত্মা বের করে দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল কোল্ড স্টোরেজের শ্রমিক ও কর্মচারীদের। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা গত বছর এ সময় তাদের সংরক্ষণকৃত আলুর বস্ত্মা বের করে নেয়ার জন্য প্রচ- রকম ভিড় করলেও এ বছরের চিত্র অন্যরূপ।
আরবি স্পেশালাইজ্ড হিমাগারের ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্ত্মফা জানান, চলতি বছর এ হিমাগারে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩২০ বস্ত্মা সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষিত আলুর বিপরীতে কোম্পানি ব্যাংক থেকে ৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। তা থেকে হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর বিপরীতে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মাঝে ৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণ শোধের ভয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা পলাতক রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে খুব কম দরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে কোম্পানির অন্ত্মত ৩ কোটি টাকা লোকসান হবে।