বনানী কবরস্থানে আনিসুল হকের দাফন সম্পন্ন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শনিবার বিকেল সোয়া ৩টার পর থেকে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জানারেল সারোয়ার হুসেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মিঞা মুহম্মদ জয়নাল আবেদীন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিনের পক্ষ থেকে সার্জেন্ট অব আর্মস ক্যাপ্টেন মোস্তাক আহমেদ শ্রদ্ধা জানান।
এর আগে দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে আনা হয়। তার কফিনবাহী বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ছাড়ার কথা ছিল তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর ৭টা ৫৮ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৫৮ মিনিটে) সেটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
গত ২৯ জুলাই নাতির জন্ম উপলক্ষে স্ত্রী রুবানা হককে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি।
গতকাল জুমার নামাজের পর লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক জামে মসজিদে আনিসুল হকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তারা জানাজায় অংশ নেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মরদেহ শনিবার দেশে আসার বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আনিসুল হক ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়াও বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজি যাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও আছে তার।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এফবিসিসিআইর সভাপতি ও তার আগে বিজিএমইএর সভাপতিও নির্বাচতি হন তিনি।
সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক মেয়র আনিসুল হকের ছোট ভাই।
লন্ডনে জানাজার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বলেন, আমরা অনেকে অবাক হয়েছিলাম তিনি যখন রাজনীতিতে যোগদান করেন।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এই দুই বছরে অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে নজর কাড়েন আনিসুল হক। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। পরে ওই সড়ক দখলমুক্ত করে সিটি করপোরেশন।
ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া বারিধারা ও গুলশানের বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাতও দখলমুক্ত করেন মেয়র আনিসুল। এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, ঢাকা চাকা, বিলবোর্ড উচ্ছেদ, গ্রিন ঢাকা কর্মসূচিসহ বেশকিছু উদ্যোগের জন্য আলোচিত হন তিনি।
তার সঙ্গে একই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেয়া সাঈদ খোকন বলেন, আনিসুল হক ‘খুব বলিষ্ঠ খুব সাহসী’ মানুষ ছিলেন। তাকে বড় ভাইয়ের মতো দেখতাম। দুজনে মিলে ঢাকার উন্নয়নে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেন তারা। তার যে শূন্যতা, এই শূন্যতা খুব সহজে পূরণ হবে না।