টাঙ্গাইলে এক মাসে প্রেমিকের হাত ধরে ১২ কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়েছে
অন্তু দাস হৃদয়, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় গত এক মাসে প্রেমিকের হাত ধরে স্কুল পড়ুয়া ১২ কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়েছে। এদের মধ্যে ছয় জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে।
পাশাপাশি ৪ কিশোরীকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বিয়ে মেনে না নেয়ায় এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।
এ দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আরও তিনটি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। মির্জাপুর উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ এ সব বিয়ের খবর জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, গত (১ নভেম্বর) মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া উর্মী আক্তার নিখোঁজ হয়। আজগানা ইউনিয়নের আজগানা গ্রামের হেলাল উদ্দিনের বাড়িতে তার সন্ধান মেলে।
নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে রবিনের সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার বিষয়টি জানালে রবিনের পরিবার তা মেনে নেয়নি।
পরে, সে বিয়ের স্বীকৃতির দাবিতে ওই বাড়িতে ওঠে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে। মির্জাপুর উপজেলার প্রশাসন ও স্থানীয় জন-প্রতিনিধির ওই কিশোরীর সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করাতে ব্যর্থ হলে সে এখনও ওই বাড়িতে রয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
একই ইউনিয়নের তেলিনা গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সিমিও প্রেমের টানে এক সন্তানের জনক। সিমি একই গ্রামের শাহিন আলমের সঙ্গে পালিয়ে যায়। পরিবারে পক্ষ থেকে মামলা করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
এ দিকে, মির্জাপুর পৌর এলাকার বাইমহাটী গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দয়ালের মেয়ে প্রেমের টানে মুসলিম এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। পরিবার মামলা করলে পুলিশ ওই মেয়েকে উদ্ধার করে।
একই গ্রামে বাসা ভাড়া করে থাকা দিলরুবা নামের স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্রী প্রেমের টানে প্রেমিককে পালিয়ে বিয়ে করেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে মেনে না নেয়ায় পরে ওই ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
অপরদিকে, মির্জাপুর উয়ার্শী ইউনিয়নের বরটিয়া দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী তার সহপাঠীর সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন। তাদের সন্ধান পাওয়ার পর উভয় পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নিয়েছে।
দুল্যা মনসুর গ্রামের হাবেলের কিশোরী মেয়ে শ্যামলী আক্তার প্রেমের টানে পোস্ট-কামুরী গ্রামের জলিল ড্রাইভারের ছেলে হাসানের হাত ধরে পালিয়ে যায়।
তাদের সন্ধান পাওয়ার পর জানা যায় তারা ২১ এপ্রিল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেছে। শ্যামলী আক্তার গত ২৭ নভেম্বর সদরের একটি ক্লিনিকে কন্যা সন্তান প্রসব করে।
তা ছাড়া, দুল্যা বেগম গ্রামের লাল মিয়ার নাতনি প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়। টাঙ্গাইল পৌর এলাকার গাড়াইল গ্রামের পাটনী পাড়ার স্বপনের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে বিয়ের আগের দিন প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেলে বর পক্ষের চাপের মুখে তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে দিয়ে দেন।
এ ছাড়া আনাই তারা ইউনিয়নের আটিয়া মামুদপুর গ্রামে দুই স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর বাল্যবিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়।
বহুরিয়া গ্রামের মোবারক খানের কিশোরী মেয়ে জুই আক্তার তার প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়।
মির্জাপুর থানায় অভিযোগের পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
সবশেষে, গত ১৯ নভেম্বর গোড়াইল গ্রামের শহীদ সিদ্দিকীর দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া সাদিয়া আক্তার নিখোঁজ হয়।
সাদিয়ার বাবা মির্জাপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা করার পর পুলিশ সাদিয়াকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
এ দিকে, শিরিন ও খাদিজা নামের আরও দুই কিশোরী (এই রিপোট লেখার আগপর্যন্ত) নিখোঁজ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মির্জাপুর থানার (ওসি) এ.কে.এম মিজানুল হক সময়ের কন্ঠস্বর’কে জানান, এ সবের মধ্যে আমারা চারজনকে উদ্ধার করেছি।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশা-পাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। গত (২৪ নভেম্বর) আটিয়া মামুদপুর গ্রামে বাল্যবিয়ের খবর পেরে (জিডির) মাধ্যমে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একজন অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ দেয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন সময়ের কন্ঠস্বর’কে বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই বাল্যবিয়ে বন্ধে মির্জাপুর উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
গত (২৩ নভেম্বর) বাল্যবিয়ে বন্ধে লিখিত ভাবে থানায় পুলিশ চাওয়া হয়েছিল। পুলিশ না পাওয়ায় বাল্যবিয়ে বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
তবে, এর সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও নির্বাহী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।