গাংনীতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা না পেলেও ভাতা পাচ্ছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা ॥
এম এ লিংকন,মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ বাবা ছিলেন শান্তি কমিটির নেতা ছেলে ছিলেন গুপ্তচর। সেই পরিবারের সদস্য বর্তমানে সরকারের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ একই গ্রামের একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা 8সে সরকারের কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এমন দুই ধরণের মানুষ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধর্মচাকি গ্রামে রয়েছে। জানা যায়, ধর্মচাকি গ্রামের মৃত মাজহারুল হক এর ছেলে মোঃ মাহাবুব এলাহী (বিষু) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় পাকিস্তানী বাহিনীদের কাজে সহযোগিতা করতো। এবং তার বাবা মাজহারুল হক ছিলো তৎকালিন পাকিস্তান শান্তী বাহিনীর সাহারবাটি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। জানতে চাইলে এ কথা অস্বীকার করে মোঃ মাহাবুব এলাহী বিষু জানায় সে রাজাকার ছিলোনা আবার প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধও করেনি তবে যুদ্ধের শেষের দিকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতের ব্যাতায় এর ইউথ ক্যাম্পে ভর্তি হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধ ৯ মাস ধরে চললেও শেষের দিকে কেন এ স্বিদ্ধান্ত? জানতে চাইলে সে দেশে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গুপ্তচরের মাধ্যমে সহযোগিতা করতো বলে দাবি করে। যে কারণে সে যুদ্ধের প্রথম দিকে ট্রেইনিং দিতে যেতে পারেনাই। তার বাবা মাজহারুল হক শান্তী কমিটির ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক ছিলো এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে তার পিতা রাজাকার ছিলোনা বরং সে সমাজের এক জন গন্য মান্য ব্যাক্তিদের একজন ছিলো বিধায় পাকিস্তানীরা গ্রামে আসলে তার কাছে আসতো। মাহাবুব এলাহী বিষু আরো জানায়, মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাদের ৮০ ভাগ লোকই ছিলো অশিক্ষিত তাই পাকিস্তানী মিলিটারিরা যে কারণেই আসতো তারা মনে করতো আমার বাবা পাকিস্তানের দোসর ছিলো। মাহাবুব এলাহী আরো জানায় মুক্তিবাহিনীদের ভয়ে আমরা অনেক সময় আত্ম গোপনে ছিলাম। এর কারণ জানতে চাইলে সে বলে তাদের অজ্ঞতার কারণে আমাদের মনে করতো রাজাকার। তাছাড়া সে আরো জানায় যুদ্ধ শেষে সাধারণ যোদ্ধাদের হাতে অস্ত্র থেকে যায় এবং তারা ছিলো নি¤œ শ্রেনীর ও অশিক্ষিত যে কারণে তারা কাজ না পেয়ে জোর করে লুটপাট শুরু করে সে কারণে তখনকার সরকার আইন শৃংখলা রক্ষার্থে মুক্তিবাহিনী তৈরী করে এই মুক্তিবাহিনীরা যাদের হাতে অন্ত্র দেখতো তাদেরকে অত্যাচার করতো যে কারণে মানুষ আতংকিত হয়ে উঠেছিলো। এই কারণে আমরা আত্ম গোপন করেছিলাম। এদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের একাধিক নেতার সাথে জানতে চাইলে তারা বলেন, ধর্মচাকির মাহাবুব এলাহীর বাবা মৃত মাজহারুল হক ওরফে মোজাহার ছিলো সাহারবাটি ইউনিয়ন শান্তী (রাজাকার) কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এবং সেও ছিলো তার বাবার মতো একজন পাকিস্তানী বাহিনীদের দোসর ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী লোক। মাহাবুব এলাহীর গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা হয়েও লজ্জা হয় যারা রাজাকার তারা আজ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান সহ সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন আর আমি মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কিছুই পাইনি। মাহাবুব এলাহী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে একজন রাজাকার ছিলো কিনা আমার মনে নেই যেহেতু যুদ্ধকালিন সময় আমি আমার গ্রামের বাইরে ছিলাম। তবে সে যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলোনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। পরে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ৯৬ সালে সরকার গঠন করে তখন অনেকে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন। পরে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আঞ্চলিক কমান্ডারদের সাথে যোগসাজশ করে অনেক রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব এলাহী ২০০৬ সালে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গেজেটেড হয়। বিলম্বে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম দেওয়ার কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহাবুব এলাহী বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের আগে কোন সুযোগ সুবিধা ছিলোনা ৯৬ সালে শেখ হাসিনা এসে প্রথম যাচাই বাছাই শুরু করেন এবং সুযোগ সুবিধা দিতে থাকেন যে কারণে সবাই তালিকা ভুক্ত হওয়ার জন্য তাগাদা করে। তাছাড়া মাহবুব এলাহী ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে অর্থনীতি গবেষনা কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরীরত থাকার কারণে তালিকা ভুক্ত হতে পারেনি বলে জানায় এবং পরে বিএডিসি থেকে ঋন সংক্রান্ত দুর্নীতির দায়ে সে চাকুরিচ্যুত হয়। সর্বশেষ ২০০৬-৭ সালের দিকে তৎকালি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম সোনার সহযোগিতায় মাহাবুব এলাহী মুক্তিযোদ্ধার ৮তালিকায় গেজেটেড হয়। এবিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার শামসুল আলম সোনা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু দিন আগে সে ভারতে ইউথ ক্যাম্পে যোগদানের সার্টিফিকেট দেখালে এবং যাচাই বাছাই করে তাকে গেজেটেড করা হয়। তিনি এও বলেন অনেক রাজাকারের ছেলেও আছে যারা দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। এদিকে মাহাবুব এলাহী সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য চেষ্টা করেন এবং সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। এদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে এ ধরণের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার দাবি করছি।