তাহিরপুর সীমান্তে মামলা ও মৃত্যু ঠেকাতে পারছেনা চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বাণিজ্য
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে মামলা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বাণিজ্য। চোরাচালানীরা বিজিবির সোর্স পরিচয় দিয়ে সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে পাচাঁর করছে কয়লা,চুনাপাথর,মদ,গাঁজা,হেরুইন,ইয়াবা,মোটর সাইকেল,গরু ও অস্ত্র। উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে কয়লা,পাথর ও মদ পাচাঁর করতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে ৮জন,চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা দিয়ে মদ ও গরু পাচাঁরের সময় ১জন,নয়াছড়া দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁরের সময় ২জন,টেকেরঘাটে চুনাপাথর পাচাঁরের সময় ১জন,লালঘাট ও লাকমা দিয়ে কয়লা পাচাঁরের সময় চোরাই গুহার নিচে মাটি চাপা পড়ে ৫জন ও চুনাপাথর পাচাঁরের সময় ট্রলির নিচে পৃষ্ট হয়ে ১জন,চাঁরাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা ও কলাগাঁও দিয়ে চুনাপাথর ও কয়লা পাচাঁরের সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে পাহাড় থেকে নিচে ২জন,জঙ্গলবাড়ি দিয়ে চুনাপাথর পাচাঁরের সময় ট্রলির নিচে চাপা পরে ২জনসহ এপর্যন্ত মোট ২৫জন নারী,শিশু ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ এব্যাপারে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ না নিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়গুলো থামা চাপা দিয়েছে বলে জানাগেছে। আর গত ৩ মাসে উপজেলার বালিয়াঘাট,টেকেরঘাট, লাউড়গড়, চাঁনপুর ও চাঁরাগাঁও সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় ৫০কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ মালামাল পাচাঁর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানাযায়-চাঁদাবাজি মামলা নং-জিআর-১৬৩/০৭ইং এর জেলখাটা আসামী বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের দুধেরআউটা গ্রামের নুরজামালের ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া,তার সহযোগী লাকমা গ্রামের আব্দুল হাকিম ভান্ডারী,ইদ্রিস আলী,কয়লা পাচাঁর ও চাঁদাবাজি মামলা নং-জিআর-১৫৮/০৭ইং এর আসামী বালিয়াঘাট গ্রামের রাশিদ মিয়ার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক,তার একান্ত অনুসারী চাঁদাবাজি মামলা নং-জিআর-২১৫/১৪ইং,কয়লা ও মদ পাচাঁর মামলা নং-জিআর-২১৭/১৪ইং,হুন্ডি ও ইয়াবা পাচাঁর মামলা নং-জিআর-১৩৫/১৬ইং ও বিজিবির উপর হামলাসহ মোট ৭টি মামলার জেলখাটা আসামী লালঘাট গ্রামের কালাম মিয়ার নেতৃত্বে লালঘাট,লাকমাছড়া ও টেকেরঘাট এলাকা দিয়ে লাকমা গ্রামের চিহ্নিত চোরাচালানী কামরুল মিয়া ২টি,রতন মহলদার ২টি,মানিক মহলদার ২টি,শরিফ মহলদার ২টি,তিতু মিয়া ২টি,আইনাল হক ১টি,মোক্তার মহলদার ৩টি,রফিকুল ইসলাম ২টি,বদিউজ্জামান ৩টি,বাবুল মিয়া ২টিসহ মোট ৩২টি চোরাইঘাট তৈরি করছে। এসব চোরাইঘাট দিয়ে তারা ভারত থেকে প্রতিদিন কয়লা,চুনাপাথর,মদ,গাঁজা,হেরোইন,ইয়াবা,মোটর সাইকেল ও অস্ত্র পাচাঁর করছে। আর পাচাঁরকৃত ১ বস্তা কয়লা থেকে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার ফখরুদ্দিনের নামে ১০টাকা,হাবিলদার আসাদের নামে ১০টাকা,নায়েক সাব্বিরের নামে ৫টাকা,নায়েক ওলির নামে ৫টাকা,নায়েক শহিদের নামে ৫টাকা,বালিয়াঘাট ক্যাম্পের মেস (খাওয়া-দাওয়া) খরছ বাবদ আরো ৫০টাকাসহ থানার নামে ৫০টাকা,টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ও ডিবি পুলিশের নামে ৫০টাকা চাঁদা নিচ্ছে সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া,ইদ্রিস আলী ও কালাম মিয়া। আর পার্শ্ববর্তী টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার মতিউর রহমানের নামে ১ বস্তা কয়লা থেকে ২০টাকা,হাবিলদার সিদ্দিকের নামে ১০টাকা,এফএস শহিদের নামে ১০টাকা চাঁদা নিচ্ছে টেকেরঘাট ক্যাম্পের সোর্স বাবুল মিয়া ও আব্দুল হাকিম ভান্ডারী। এছাড়া ঢাকা হেড অফিস,সিলেট বিভাগ,জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে ৫০টাকা চাঁদা নিচ্ছে আব্দুর রাজ্জাক। এবং লাকমাছড়া ও টেকেরঘাট ছড়া দিয়ে ভারত থেকে মরা পাথর,বল্ডার পাথর,নুড়ি পাথর আনার জন্য ১ ট্রলি পাথর থেকে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক,তাহিরপুর থানা,টেকেরঘাট পুলিশ ক্যাম্প ও টেকেরঘাট,বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের নামে ৩৫০টাকা ও ১ ট্রলি চুনাপাথর থেকে ৫৫০টাকা চাঁদা নেওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক চাঁদা নিচ্ছে উপরের উল্লেখির সোর্স পরিচয়ধারীরা।
অন্যদিকে চাঁরাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা,লালঘাট,চাঁরাগাঁও এলসি পয়েন্ট,জঙ্গলবাড়ি ও কলাগাঁও এলাকা দিয়ে বিজিবির সোর্স শফিকুল ইসলাম ভৈরব ও তোতা মিয়ার নেতৃত্বে চোরাচালানী বাবুল মিয়া,আব্দুল হাসিম,মরতুজ আলী,মোবারক হোসেন,ফালান মিয়া,সাইদুল মিয়া,সোনা মিয়া,মজিদ মিয়া গং ১৫টি চোরাইঘাট দিয়ে ভারত থেকে কয়লা,সাদাপাথর,বল্ডাপাথর,মদ,গাঁজা,হেরোইন,ইয়াবা,মোটর সাইকেল, গরু ও অস্ত্র পাচাঁর করছে। পাচাঁরকৃত ১বস্তা কয়লা থেকে ১২০টাকা,১ট্রলি মরাপাথর থেকে ৭০টাকা করে বিজিবির নামে চাঁদা নিচ্ছে সোর্স শফিকুল ও তোতা মিয়া। এছাড়া লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী ও পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন অবাধে কয়লা,পাথর,মদ,গাঁজা,হেরুইন,মোটর সাইকেল ও গরু পাচাঁর করা হচ্ছে। আর পাচাঁরকৃত ১ বারকি নৌকা পাথরের জন্য ৫০০টাকা,১ বস্তা কয়লা থেকে ৮০টাকা ও ১ লড়ি বল্ডার পাথরের জন্য ২০০টাকা করে বিজিবি ক্যাম্পের নামে চাঁদা নিচ্ছে পুরান লাউড়গড় গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে বিজিবি সোর্স মোবারক মিয়া ও লোকমান মিয়া। চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা,রাজাই ও নয়াছড়া দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন মদ,গাঁজা,হেরোইন, ইয়াবা,গরু, কয়লা,চুনাপাথর পাচাঁর করে বিজিবি ও পুলিশের নামে ৫শ থেকে ৫হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিচ্ছে মদ পাচাঁর মামলার জেলখাটা আসামী আবু বক্কর ও তার সহযোগী রফিকুল।
এব্যাপারে বালিয়াঘাট,লাকমা ও বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনের ব্যবসায়ী-নাসির উদ্দিন,কফিল উদ্দিন,তারা মিয়া,সবুজ মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন,সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে বিজিবি সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া,কালাম মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক রাতারাতি বাড়ি,গাড়ী ও জায়গা-জমি কিনাসহ একাধিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন।
বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক চোরাচালান ও চাঁদাবাজি মামলার জেলখাটা আসামী কালাম মিয়া দাপটের সাথে বলেন,আমরা বিজিবির নির্দেশে তাদের সোর্স হয়ে কাজ করছি,আমাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখে কিছুই হবেনা,বরং আমাদের গুরু আব্দুর রাজ্জাক ভাই মামলা দিয়ে উল্টো আপনাকে ফাঁসিয়ে দেবে।
এব্যাপারে চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার শাজাহান বলেন,শফিকুল ও তোতা মিয়া কে আমি চিনি না,আমাদের কোন সোর্স নেই,বিজিবির নাম ভাংগিয়ে কেউ অবৈধ কাজ করলে তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে। বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার ফখরুদ্দিন বলেন,আমাদের ক্যাম্পের সোর্স আছে কিনা তা জানতে হবে এবং তারা কি চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে কিনা তাও খোঁজ নিতে দেখতে হবে। বিজিবির টেকেরঘাট কোম্পানীর দায়িত্বে থাকা কমান্ডার সুবেদার মতিউর রহমান বলেন-চোরাচালানের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই মালামাল নিয়ে চোরাচালানীরা পালিয়ে যায়,কারণ সব জায়গাতে চোরাচালানীদের লোক থাকে। এব্যাপারে জানতে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক নাসির উদ্দিনের সরকারী মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।