অপারেটরদের বিটিআরসি- বোঝাপড়ায় ফোরজি যুগের দ্বারপ্রান্তে দেশ
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এক সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যেকোন মূল্যে ২০১৭ সালের মধ্যেই ফোর-জি চালু করার তাগাদা দেন। এরপর ফোরজি নীতিমালা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং মোবাইলফোন নেটওয়ার্ক অপারটেরদের (এমএনও) মধ্যে চলতে থাকে আলোচনা। বছর পেরিয়ে সেই সুদীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর অবশেষে দুই-একটি ‘ছোট’ বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে বিটিআরসি এবং ৫টি এমএনও। বুধবার টেকনোলজি নিউট্রালিটি বা প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার গাইডলাইন বুঝে পেয়েছে মোবাইলফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিটিআরসি জানিয়েছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা ৫টির মধ্যে ৪টি এমএনও আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। তবে স্পেকট্রাম না থাকায় আপাতত সিটিসেলের ফোরজি লাইসেন্স আবেদন অনুমোদন পাচ্ছে না। ফোরজি নীতিমালা অনুযায়ী দেনার দায়গ্রস্থ টেলিটকের আবেদনও অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। এজন্য টেলিটকের অভিভাবক হিসেবে সরকারের ওপর ভরসা রেখে লাইসেন্স আবেদন অনুমোদন করছে বিটিআরসি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইলফোন অপারেটরটির হাতে যথেষ্ট স্পেকট্রাম থাকায় ফোরজি নিলামে অংশ নিতে হচ্ছে না।
ফোরজি যুগে যাত্রা শুরুর চূড়ান্ত পর্বে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর।
১৩ ফেব্রুয়ারি স্পেকট্রাম নিলামের ৪-৫ দিনের মধ্যে ফোরজি লাইসেন্স দিয়ে দেয়া হবে জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: প্রতিষ্ঠানগুলো ফোরজি লাইসেন্সের যোগ্য কিনা সেটা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিটিআরসি কমিটি করে দিয়েছিল। একেকটি আবেদন বিশালাকার। এগুলো যাচাই-বাছাই করে যেসব প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা সম্পন্ন তাদের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। এটা হুট করে হয়নি।
সিটিসেল ও টেলিটকের ফোরজি যাত্রা প্রসঙ্গে ড.শাহজাহান মাহমুদ বলেন: সিটিসেল এখন ফোরজি লাইসেন্স পাবে না। আইন অনুযায়ী তাদের হাতে স্পেকট্রাম থাকতে হবে। সিটিসেল স্পেকট্রাম কিনলে ফোরজি লাইসেন্স পাবে। টেলিটকের হাতে স্পেকট্রাম আছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি নিলামে অংশ গ্রহণ করবে না। গাইডলাইন অনুযায়ী দেনাগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাবে না বলা হলেও সরকার টেলিটকের বিষয়টি দেখছে বলে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স আবেদন অনুমোদন করা হচ্ছে।
ফোরজি যাত্রায় অপারেটরদের সামনে সবগুলো প্রতিবন্ধকতাই কাটিয়ে ওঠা গেছে জানিয়ে অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নূরুল কবীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সরকারের নীতি নির্ধারক, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সবাই আমরা একটা টিমওয়ার্কের মতো কাজ করছি। সেক্ষেত্রে যেসমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছিলো সবগুলোই আমরা তুলে ধরেছি এবং সরকারও যথেষ্ট সহযোগিতাপূর্ণভাবে সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখেছে। এতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আজকেই আমরা টেকনোলজি নিউট্রালিটির গাইডলাইনটি পেয়েছি।
কিছু ছোটখাটো ব্যাখ্যাগত জায়গায় ফাঁক আছে জানিয়ে তিনি বলেন: ছোটখাটো দুই-একটা জিনিস আছে, সেটা ইন্টারপ্রিটেশনের গ্যাপ। সেটাও আমরা আলোচনা করেছি, সেসবেরও সমাধান হয়ে যাবে দুই-একদিনের মধ্যে।
ফোরজি আবেদনে কোন তথ্যগত ঘাটতি ছিলো না দাবি করে তিনি বলেন: যদি ঘাটতি থাকতো তাহলে তো আবেদন করা অপারেটরদের আবেদন অনুমোদনই দিতো না বিটিআরসি। একটি গাইডলাইনের দরকার ছিলো, সেটা পেয়েছি। গাইডলাইন বিনিয়োগের দিক নির্দেশনা দেয়। বিনিয়োগের জন্য যখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই তখন এই গাইডলাইনে বিনিয়োগের জন্য যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে সেসব নিয়ে আলোচনা করেছি।
ছোট্ট দুই-একটা জায়গায় কিছু বিষয় আছে সেগুলো আশা করি সমাধান হয়ে যাবে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে গাইডলাইনের প্রতিবন্ধকতাকে মেনে সমাধানের কথা বলা হয়েছে সেজন্য সরকার-বিটিআরসিকে সাধুবাদ জানাই। এজন্য ফোরজিতে বিনিয়োগ করছি আমরা।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফোরজি যুগের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর ঘোষণা দেয় বিটিআরসি।
বিটিআরসি ফোরজি এবং স্পেকট্রাম নিলামের জন্য ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবেদন আহ্বানের পর ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন নেওয়া হবে। আর প্রি-বিড মিটিং অনুষ্ঠিত হবে ২১ ডিসেম্বর।
১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন পত্র নিয়ে বিটিআরসি যোগ্য আবেদনকারীর তালিকা প্রকাশ করবে ২৫ জানুয়ারি। ২৯ জানুয়ারি নিলামের আলোচনা, ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিড আর্নেস্ট মানি প্রদান, ৭ ফেব্রুয়ারি নিলামের চিঠি প্রদান, ১২ ফেব্রুয়ারি মক নিলাম, ১৩ ফেব্রুয়ারি নিলাম হবে।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবার এ নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এটি হাতে পাওয়ার পর তখন অপারেটরগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩টি আপত্তি দিয়েছিলো। এরপর ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এসব আপত্তির অধিকাংশই সমাধান করে দেন। পরে বিটিআরসি অপারেটরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার মূল্য নির্ধারণ করে সংশোধিত নীতিমালাটি ৮ নভেম্বর টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। গত ২৯ নভেম্বর ফোরজি নিয়ে সর্বশেষ সংশোধিত নীতিমালায় অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন নীতিমালায় ফোরজির ন্যূনতম গতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ২০ এমবিপিএস, যেখানে মহাসড়কে চলাচলকালে ও ট্রেনে ভ্রমণের সময় শুধু ইন্টারনেটের গতি সর্বনিম্ন হতে পারবে। এই নীতিমালা অনুযায়ী ২১০০ মেগাহার্জ, ১৮০০ মেগাহার্জ এবং ৯০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলাম হবে। যার মধ্যে ২১০০ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্জের নিলামের ফ্লোর মূল্য হবে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর ১৮০০ ও ৯০০ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্ডজ স্পেকট্রামের নিলামের ভিত্তি মূল্য হবে তিন কোটি ডলার।