রাবিতে ‘অমানবিক’ র্যাগ, আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছাড়লো শিক্ষার্থী!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের নামে ‘অমানবিক’ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের সিনিয়রদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাকে র্যাগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ সেই শিক্ষার্থীর।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ফাহাদ বিন ইসমাঈল। তিনি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ¯্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। এদিকে ছেলেকে র্যাগিংয়ের কথা শুনে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন সেই শিক্ষার্থীর মা। তিনি এখন ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ, প্রথম বর্ষের পরিচিতি ক্লাসের দিনে আমি স্যুট পরে এসেছিলাম। যা বিভাগের সিনিয়রদের দৃষ্টিকটু মনে হয়। এদিন আমাকে হুমকি দেয়া হয় যে আমাকে র্যাগ দেয়া হবে। পরের দিন ক্লাসে আমাকে দাঁড় করিয়ে আমি বেশি স্মার্ট হয়ে গেছি, আমার চুল বড়, আমাকে ন্যাড়া করতে হবে, এরকম নানা কথা বলেন তারা। এরপর আমার জামাকাপড় খুলে আমাকে তারা নির্যাতন করে আর আমার বাবা মাকে নিয়ে গালিগালাজ করে। এসময় তৃতীয় বর্ষের আল আমীন নামের এক বড় ভাই আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এই বিভাগে তোমার ভালো রেজাল্ট করার সুযোগ নেই। এখন তোমার বাঁচার কোন রাস্তা নাই।
বিভাগের শিক্ষকদের এ বিষয়ে জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেকেন্ড ইয়ারের ভাইয়ারা আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন বিভাগে না যেতে। গেলে আমার খুবই খারাপ হবে। তারপরও আমি বৃহস্পতিবার আমি ক্লাসে যাই। সেখানে আল আমীন ভাইসহ দ্বিতীয় বর্ষের ৭-৮ জন ভাই-আপু আমাকে র্যাগ দেয়া শুরু করে। তারা আমাকে কৃষি অনুষদের ভবনের ভেতরে আটকে রেখে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। তারা আমার প্যান্ট, শার্ট খুলতেও বাধ্য করেছিল।
তিনি আরও বলেন, বিকেল ৪টার পর ওই ভাইয়া আর আপুরা আমাবে ভবনের বাইরে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসে। সেখানে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সারাদিন তারা আমাকে না খাইয়ে রেখেছিল। এরপর রাত ৭টার দিকে তারা আমাকে ছেড়ে দেন। মেসে গিয়ে ঘটনাটি আমার মাকে বললে তিনি মা ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি এখন হাসপাতালে। এরপর আমার বাবা আমাকে বলে এখন আর এখানে পড়ার দরকার নেই। তারা আমাকে বাড়িতে ডেকে পাঠায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমীন দাবি করেন, এসবের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর কিছু একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। আমি তাদের কাছে বিষয়টি শুনেছি মাত্র।
দি¦তীয় বর্ষের অভিযুক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, প্রথম বর্ষের সেই শিক্ষার্থীকে তারা র্যাগ দেননি। ইসমাঈল নামের সেই শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের ফেসবুক গ্রুপে বিভাগের বড় আপুদের নিয়ে বাজে কমেন্ট করেছিল। এটা তারা প্রথমবর্ষের অন্য শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানতে পারেন। এজন্য ইসমাঈল ‘শাসন’ করা হয়েছিল যেন সে পরবর্তীতে আর কখনো এমন কমেন্ট না করে।
এ বিষয়ে ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। যদি সত্যি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে তদন্ত করে ঘটনাটির সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি বিভাগের সভাপতিকে জানিয়ে জড়িতদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলব। যদি তারা যথাযথ পদক্ষেপ না নেয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।