গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ব্যতিক্রমী শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন প্রভাষ বিশ্বাস
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিভৃত পল্লীর অন্ধকারে আলোর দিশারী প্রভাষ বিশ্বাস। যিনি দরিদ্র ও অসহায়, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো বিস্তারের লক্ষ্যে চালিয়ে যাচ্ছে নিরন্তন সংগ্রাম। আর তাই দরিদ্র্য শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন কোচিং সেন্টার।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সাফলীডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র কৃষক রতন বিশ্বাসের ছেলে প্রভাষ বিশ্বাস। প্রভাষের জন্ম অভাবের সংসারে, লেখাপড়া বেশি দূর হয়নি, এ অভাবের কারণেই। কিন্তু লেখাপড়া জীবনে যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে অসহায়, দরিদ্র্য পীড়িত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। রোদ-বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে ছুঁটে যান শিক্ষার্থীদের পাশে। নানা প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও সেবা থেকে একটুও পিছ পা হননি। যার শিক্ষার সংস্পর্শে এসে অনেক তুচ্ছ শিক্ষার্থীরাও ভাল ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছে। তার শিক্ষা নীতিতে প্রতিটি শিক্ষার্থী বিশ্বাসী। সবার প্রিয় প্রভাষ দাদা। গোটা উপজেলায় সবাই তাকে প্রভাষ দাদা বলে ডাকে।
প্রভাষ বিশ্বাস জানান, আমার সামনে কোন শিক্ষার্থী যেন শিক্ষা থেকে ঝরে না যায়। তিনি আরো জানান, আমি দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় আমার সহপাঠীদের প্রাইভেট পড়ানোর মাধ্যমে আমার এ যাত্রা। আমি ১৯৯৮ সালে এসএসসি পাশ করি। অর্থনৈতিক কারণে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। পরে সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। সেই ১৯৯৯ সাল থেকে আজ ২০১৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।
বর্তমান প্রভাষ বিশবাসের কাছে প্রায় ৪০ টি গ্রামের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত লেখাপড়া করছেন। এ বছর প্রভাষ বিশ্বাসের ১০৮ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। শনিবার সন্ধায় উপজেলার রামদিয়া বাজারে অবস্থিত প্রভাষ বিশ্বাসের গড়ে তোলা শুভ কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে আয়োজিত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ মাসুম শেখ, কাশিয়ানী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শহিদুল আলম মুন্না, ছাত্রনেতা শেখ আবুল হাচান এবং বিভিন্ন সালের পুরানো শিক্ষার্থীসহ আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
প্রভাষের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আজ দেশ-বিদেশে চাকরি করছেন, কেউ ডাক্তার, কেউ মাষ্টার, কেউ সাংবাদিক হয়েছেন। আবার অনেকে দেশের খ্যাতিনামা স্কুল-কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।