ঝুট কাপড়ের তৈরি দড়ি ও তুলা বদলে দিয়েছে রাণীনগরের হাজারো মানুষের ভাগ্য
শাহরুখ হোসেন আহাদ,রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরের প্রায় ২০ টি গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠান যেন এক একটি তাঁতশিল্প। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গ্যার্মেন্টস থেকে আনা ঝুট কাপড় থেকে রাণীনগরে তৈরি হচ্ছে তুলা ও দড়ি। ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে অবহেলিত গ্রামের খেটে খাওয়া অসংখ্যা নারী-পুরুষের জীবন-যাত্রার মান। জাতীয় উন্নয়নে আর্থিক ভাবে ভূমিকা রাখছে এখানকার শ্রমজীবি নারী-পুরুষরা। এলাকার ১১ টি তুলার মিল সহ উপজেলার কুবরাতলী, চকাদিন, চকমনু, পূর্ববালুভরা, বেলবাড়ি, দাউদপুর, লোহাচূড়া, খট্টেশ্বর, রাণীনগর সদর গ্রাম সহ ২০/২২ টি গ্রামের প্রায় ১৭ হাজার নারী-পুরুষ এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। ঝুট কাপড়কে কেন্দ্র করে রাণীনগরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি জায়গায় ঝুট কাপড় বেচা-কেনার বাজার।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গ্যার্মেন্টস থেকে ট্রাক যোগে আনা হয় ঝুট কাপড়। ঝুট কাপড়ের ট্রাক আসা মাত্রই হুমড়ি খেয়ে পড়ে দড়ি তৈরির সাথে জরিত স্থানীয় নারী-পুরুষ ও এলাকার তুলার মিল মালিকরা। কাক ডাকা ভোর থেকে চলে গ্যার্মেন্টসের এই ঝুট কাপড় কিনা-বেচা। প্রতিটি ঝুট কাপড়ের বস্তার ওজন ৮০-৮৫ কেজি। প্রতি কেজি ঝুট কাপড়ের দাম ৪৫ টাকা। একটি বস্তা থেকে দড়ি তৈরী করে বাজারে বিক্রির পর খরচ বাদে লাভ আসে প্রায় দেড় হাজার টাকা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে সপ্তাহে দুই বস্তা ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরী করা যায়। ঝুট কাপড় থেকে গ্রামের বধুরা তৈরী করছে শিখা, গরু ও ছাগলের দড়ি আর মানসম্পূর্ণ তুলা তৈরি করছে মিল মালিকরা। ঝুট কাপড়ের তৈরী দড়ি মজবুত ও টেকশই হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। যার ফলে ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে অবহেলিত গ্রামের খেটে খাওয়া অসংখ্যা নারী-পুরুষের জীবন-যাত্রার মান। জাতীয় উন্নয়নে আর্থিক ভাবেও ভূমিকা রাখছে এখানকার শ্রমজীবি নারী-পুরুষরা। এলাকার ১১ টি তুলার মিল সহ উপজেলার কুবরাতলী, চকাদিন, চকমনু, পূর্ববালুভরা, বেলবাড়ি, দাউদপুর, লোহাচূড়া, খট্টেশ্বর, পশ্চিম বালুচভরা, রাণীনগর সদর, কাশিমপুর গ্রাম সহ ২০/২২ টি গ্রামের প্রায় ১৭ হাজার নারী-পুরুষ এই পেশায় বর্তমানে নিয়োজিত রয়েছে। এই পেশার সাথে জরিতদের দাবি, সরকার যদি তাদেরকে কোন ভাবে পৃষ্টপোষকতার সুযোগ করে দিতে পারে তাহলে দড়ি তৈরির কাজ করে ঘুরে দ্বারাতে পারবে বলে তারা আশা করছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন সহ বেকারত্ব দূর হবে বলে আশা করেন সচেতনমহল।
উপজেলার পূর্ব বালুভরা গ্রামের দড়ি তৈরির কাজে জরিত তুলি আক্তার, ফরিদা বেগম সহ অনেকেই বলেন, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে ২/৩ দিন এলাকার মহাজনরা ট্রাকে করে ঝুট কাপড় নিয়ে আসে। সেখান থেকে ঝুট কাপড় ৪০ টাকা কেজি দরে কিনে বাড়িতে দড়ি তৈরি করি। ৮০/৮৫ কেজি ওজনের ঝুট কাপড়ের এক বস্তা থেকে দড়ি তৈরী করে বাজারে বিক্রির পর খরচ বাদে লাভ আসে প্রায় দেড় হাজার টাকা। পরিবার-পরিজন নিয়ে দড়ি তৈরির কাজ করে আগের চেয়ে অনেক ভাল চলছে আমাদের সংসার।
নওগাঁ শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক মো: নজরুল ইসলাম জানান, দারিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সম্প্রসারনে বিসিক কাজ করে যাচ্ছে। জেলায় যারা শিল্প উদ্যোক্তা আছেন তাদেরকে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণ এবং শিল্প কারখানা সম্প্রসারণের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়। যেসব উদ্যোক্তা আছেন তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সর্বাত্মক সহযোগীতা করব।