রাণীনগরে দুর্বৃত্তদের মারপিটে জখম হয়ে হাসপাতালের শয্যা থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থী মারুফ
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে মো: মারুফ হোসেন (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করেছে কতিপয় দুর্বৃত্তরা। মারপিটের জখম নিয়েই হাসপাতালের শয্যা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী মারুফ। মারুফ চলতি এসএসসি পরীক্ষায় রাতোয়াল আরএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণ করছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের রাতোয়াল গ্রামের শৈলগাড়িয়া পাড়ায় এই নির্মম মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। আহত মারুফ হোসেন উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের রাতোয়াল গ্রামের শৈলগাড়িয়া পাড়ার মৃত- গ্রাম্য ডাক্তার সামাদ প্রামাণিকের ছেলে।
শিক্ষার্থী মারুফ জানায়, সে যেন পড়ালেখা করে বড় কোন কিছু হতে না পারে এই জন্য তার এসএসসি পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে তার চাচাতো ভাই পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে এই মারপিটের ঘটনা ঘটিয়ে তাকে গুরুতর জখম করেছে। এছাড়াও তাদের পারিবারিক পূর্বের শত্রুতার জেরও এই মারপিটের মূল কারণ। শুক্রবার সন্ধ্যায় মারুফ রাতোয়াল বাজার থেকে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলো। পথিমধ্যে নির্জন রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে একই গ্রামের মারুফের আপন চাচাতো ভাই বাংলাদেশ রেলওয়ের খালাসী চাকরিজীবী রহমান প্রামাণিকের ছেলে মো: আক্তার হোসেনের মদদে নিপুসহ ৪-৫ জন দুর্বৃত্তরা কোন কারণ ছাড়াই রড ও বাঁশ দিয়ে মারুফকে অতর্কিত ভাবে মারপিট করতে শুরু করে। এতে মারুফের পা ও ডান হাত সবচেয়ে বেশি জখম হয়। পরে স্থানীয়রা জানতে পেরে গুরুতর আহত অবস্থায় মারুফকে উদ্ধার করে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়। বর্তমানে হাসপাতালের শয্যা থেকেই শনিবার শত কষ্টকে উপক্ষো করে মারুফ অনেক কষ্টে বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে। কিন্তুতার ডান হাতের জখমের কারণে পরীক্ষায় তেমন ভালো লিখতে পারেনি বলে মারুফ জানায়।
শিক্ষার্থী মারুফের মা ফাইমা বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তারা আমাদের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করেছে। আর শত্রুতা থাকলে আমার সঙ্গে আছে কিন্তু আমার ছেলের কি অপরাধ। আমি অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে আসছি। মারপিটের কারণে আজ আমার ছেলে ভালো করে পরীক্ষা দিতে পারছে না। হাসপাতালের শয্যায় মারুফ যন্ত্রনা নিয়ে পড়ালেখা করতে পারছে না। আমার ছেলের ভবিষ্যৎ যারা নষ্ট করে দিলো আমি তাদের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।
এব্যাপারে সরকারি চাকরিজীবী মারুফের চাচাতো ভাই মো: আক্তার হোসেন বলেন, এগুলো সম্পন্ন মিথ্যো ও বানোয়াট।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ খবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা: কানিজ ফাতেমা বলেন, মারুফের শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে ডান হাত ও পায়ে সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছে। তাই মারুফকে এখনো বেশ কয়েকদিন যাবৎ চিকিৎসা নিতে হবে। তবেই সে বাড়িতে যাবার মতো সুস্থ্য হয়ে উঠবে।
এব্যাপারে রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে মারুফের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।