ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদণ্ড
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের করাদণ্ড দিয়েছে বিশেষ আদালত। বৃহস্পতিবার বিশেষ জজ-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
আর বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বাকী ৫ জনকে ১০ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত।
বিশেষ জজ-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায় পড়া শুরু করবেন। এ মামলার অপর দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদকে আগেই এজলাসে আনা হয়।
এর আগে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এরই মধ্যে আদালতে পৌঁছেছেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি রাজধানীর বকশিবাজারে স্থাপিত বিশেষ অস্থায়ী আদালতে পৌঁছান। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার হাজিরা জমা দেন তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।
মামলার অপর দুই আসামি শেফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হক কামিলকে আদালতে নেয়া হয়েছে। রায়কে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা হাইকোর্ট এলাকায় অবস্থান নেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
এদিকে, রায় ঘোষণা নিয়ে রাজধানীর বকশি বাজারে আদালত চত্বর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশি বাজারের আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে আদালতের আশপাশ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর ছাড়াও সারাদেশে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা হয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিজিবি মোতায়েন রাখা হয়েছে।
এ মামলার আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বকশি বাজার মোড়ে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন।
এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বকশি বাজারে আসতে শুরু করেছেন।
রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ অন্যদের সাজা হতে পারে, আবার তাঁরা খালাসও পেতে পারেন।
এ ছয় আসামির বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন, সর্বনিম্ন যেকোনো মেয়াদে কারাদণ্ড এর সঙ্গে আর্থিক কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিদেশ থেকে পাঠানো এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এই মামলা করে।
তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আদালত খালেদা জিয়াসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।
দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তার সরকারি কর্মচারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার, বণিক, আড়তদার, দালাল, অ্যাটর্নি হিসেবে তার ব্যবসায় যে কোনো প্রকারের কোনো সম্পত্তি বা কোনো সম্পত্তির উপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হয়ে সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আর দুর্নীতি দমন আইনের ৫(২)-এ বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের যোগ্য হবেন। অপরাধমূলক অসদাচরণ সংশ্লিষ্ট অর্থিক সম্পদ অথবা সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান। মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ১২.৫৫ লাখ মার্কিন ডলার আসে যা বাংলাদেশি টাকায় তৎকালীন ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় না দিয়ে অস্তিত্ববিহীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। অথচ কোনো নীতিমালা তিনি তৈরি করেননি, করেননি কোনো জবাবদিহিতীর ব্যবস্থাও। অথচ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা অস্তিত্ববিহিনী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে পাঠান। পরে ওই টাকা আত্মসাত করেন যার জন্য তিনি দায়ী। তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থেকে নিজের পদমর্যাদা বলে সরকারি এতিম তহবিলের আর্থিক দায়িত্ববান বা জিম্মাদার হয়ে বা তহবিল পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধ করেছেন।