মেহেরপুরে ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মসংস্থান পেয়েছে সাড়ে তিন হাজার হতদরিদ্র শ্রমিক। কাজের মান যাচাইয়ে খুশি বিশ^ব্যাংকের প্রতিনিধি দল
এম,এ লিংকন,মেহেরপুর
মেহেরপুর জেলায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে চলমান “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি” (ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় কর্মসংস্থান পেয়েছে ৩৫০৭ জন অতিদরিদ্র দিনমজুর। তাদের কজে সাফল্যের মুখ দেখেছে এ কর্মসুচী। এ কমসুচীর কারনে জেলার উন্নয়নে যোগ হয়েছে নতুন একটি মাত্রা। মেহেরপুর জেলা কৃষি নির্ভরশীল জেলা। এ জেলায় নেই তেমন কোনো কলকারখানা বা শিল্প্র প্রতিষ্ঠান। কৃষি কাজই জেলার মানুষের এক মাত্র কর্ম সংস্থানের মাধ্যম। জেলার অধিকাংশ কৃষকই দারীদ্র সীমার মধ্যে দিনযাপন করেন। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত জেলার দরিদ্র মানুষেরা কাজের অভাবে বাড়িতে অলস সময় কাটান। এই সময়ে কাজের অভাবে তারা অনাহারে -অর্ধাহারে দিনাতিপাত করে। তাছাড়া জীবন চালাতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছে কিস্তির টাকায় নাজেহাল হয়ে পড়েন। তাই এই দরিদ্র মানুষেরা যাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে; সে জন্য বিশ্বব্যাংক চালু করেছে “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি” (ইজিপিপি)। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্ব-স্ব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে,২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে এই প্রকল্পের জন্য মেহেরপুর জেলায় ৩৫০৭ জন উপকারভোগীর বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২৭০ জন,মুজিবনগর উপজেলায় ৫৩১ জন এবং গাংনী উপজেলায় ১৭০৬ জন উপকারভোগীর বরাদ্দ পেয়েছে।
অনলাইন এনরোলমেন্ট প্রসেসের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নে বিধি মোতাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে গাংনীতে ৪৫ টি,সদর উপজেলায় ২৫ টি এবং মুজিবনগরে ২০ টি প্রকল্পে শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে শতভাগ শ্রমিক উপস্থিতি ও কাজের মানও সন্তোষ জনক। বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গৃহীত প্রকল্পের শ্রমিকেরা স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী,শ্রমিক সরদার ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ৬ নং ওর্য়ার্ডের শ্রমিক সর্দার ইয়াকুব আলী জানান, তার দলে যে সকল শ্রমিকেরা কাজ করেন তাদের সকলেই হতদরিদ্র। এ কর্মসুচীর কারনে কোনরকম জীবন ধারন করছেন, অনÍত না খেয়ে থাকতে হচ্ছেনা। ভাটপাড়া গ্রামের মৃত সুরমান আলীর বিধবা কন্যা তরিফা খাতুন কর্মস্থলে এ প্রতিবেদককে জানান, ছোট বেলায় বাবা মারা গেছে। মা কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছিল, কিšুÍ স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর মায়ের সংসারে মাঝে মধ্যে না খেয়ে থাকতে হতো, এ প্রকল্প চালু থাকায় আমি কাজ করে হলেও জীবন যাপন করছি। খাসমহল গ্রামের লেবার সর্দার ইলিয়াস হোসেন জানান, এ প্রকল্প চালু থাকলে বয়স্ব শ্রমিকরা না খেয়ে থাকবে না । ভিক্ষার চেয়ে কাজ করে রোজগার করা অনেক সম্মানের। তবে মজুরী বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকেরা জোর দাবি জানিয়েছেন। তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শ্রমিক সর্দার আতাহার আলি জানান, ভাগ্গিস এ কাজ পেয়েছিনু,তা নাহলি না খেয়ে থাতকি হতো। শ্রমিক সর্দার আইজদ্দিন বলেন, আমাদের এ প্রকল্পের আওতায় অনেক বয়ষ্ক মানুষ কাজ করে। যারা কাজ করে তারা আন›দের সাথেই কাজ করে। যার ফলে কাজের গুনগত মান শতভাগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলিপ কুমার সেন জানান,চলতি অর্থ বছরে ১ম পর্যায়ে চলমান কাজে স্বচ্ছতা আনার জন্য তাঁরা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসার,বিভিন্ন দপ্তরের ট্যাগ অফিসার ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ কাজে নজরদারি করছেন। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল অত্র উপজেলায় দুই সপ্তাহ অবস্থান করে বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পরিদর্শন টিম লিডার মি: হোসেন পরিদর্শন টিমের দায়িত্বে ছিলেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান,গত অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। পুনরায় কোথাও অনিয়ম দেখা দিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল জানান, ‘আমি নিজে বিভিন্ন সময়ে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি পরিদর্শন করেছি এবং চলমান কাজে সচ্ছতা আছে। এ ভাবে কাজ চলমান থাকলে প্রকল্প শতভাগ পুরন করা সম্ভব হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিনও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, প্রকল্পের কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের সারাদিন পরিশ্রম করানো হচ্ছে।