প্রদীপে জ্বলছে গোখরার আলো গাজীপুরের কাপাসিয়ার বরুন গ্রামে
গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
সাপ ভয়ানক এক বিষাক্ত প্রাণী, মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম সাপ। যে কেউ সাপের কথা শোনলেই গা শিউরে উঠে। তবে ভালবাসা আর সঠিক কলাকৌশল থাকলে ভয়কে জয় করা যায় সহজেই। সারা বিশ্বে সাপের বিষের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই সাপের খামার চালু হয়েছে । এবার গাজীপুরের কাপাসিয়ার বরুন গ্রামে কলেজ ছাত্র প্রদীপও তার দুই বন্ধু মিলে গড়ে তোলেছেন গোখড়া সাপের খামার। যাতে রয়েছে গোখড়ার ৩ প্রজাতির প্রায় ২৫টি সাপ। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও কলেজ ছাত্র প্রদীপ দাস ও তার দুই বন্ধু মিলে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন এই সাপের খামার। প্রদীপের এই খামারে পালন করা সাপের বিষ প্রক্রিয়াজাত করে কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটুখানি নজর দিলেই অপার সম্ভাবনাময় এই সাপের খামার (শিল্প) দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । প্রদীপের এই খামার দেখে উদ্ভুদ্ব হয়ে অনেকেই সাপের খামার গড়ে তোলতে চাচ্ছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে বরুন গ্রামে ৫ বাই ৫ ফিটের দুটি পাকা ঘরে চলছে প্রদীপদের সাপ লালন-পালন। একেক সাইজের এবং একেক প্রজাতির সাপগুলো রাখা হয়েছে আলাদা। সাপগুলো এমনভাবে গিজি গিজি অবস্থায় পেচিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে, যা দেখলে গা শিহরে উঠার মতো। সংরক্ষিত হওয়ার পরও অনেক দর্শনার্থী উকি মেরে সাপ দেখে কৌতুহল মেটায়।
ব্যতিক্রমি এই সাপ খামারের উদ্যোক্তা তিনজন। বরুন গ্রামের তিন বন্ধু প্রদীপ দাস, মাসুদ ও কাউসার সাপ পালনে নিজেরা একটি সাপের খামার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
সাপের খামার গড়ে তোলার পেছনে প্রদীপ দাস বলেন, ২০১৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষা শেষে তিন বন্ধু কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। পরে তিন বন্ধু ব্যতিক্রমি সাপের খামার গড়তে সিদ্ধান্ত নেয়। আর যেই কথা সেই কাজ। পরে সাভারের বক্তাপুর বেদে পল্লী থেকে ৬টি গোখড়া সাপ কিনে আনেন। একেকটি সাপ সাতশ’ টাকায় কেনেন তিন বন্ধু।
পরে তিন বন্ধু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে সাপ খোঁজে আনেন। এভাবে একটি-দুটি করে ২৫টি সাপ সংগ্রহ করেন তিন বন্ধু। প্রদীপদের সাপের খামারে ইতিপূর্বে ২০টি ডিম দেয় গোখড়া সাপ। কিন্তু একটি ডিমও ফুটেনি। তবে এতে তিন বন্ধু পিছপা হননি। চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সাপের খামার। তবে এলাকার সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের এই সাপ পালনে উৎসাহ যোগাচ্ছেন বলে জানায় প্রদীপ দাস।
প্রদীপে বন্ধু মাসুদ বলেন, খামারের সাপের প্রধান খাবার ইদুর, ব্যাঙ, মুরগীর বাচ্চা ও ডিম। এসব খাবার সংগ্রহ করতে লোকবল এবং অর্থের দরকার। কিন্তু খামার থেকে কোনো আয় না হওয়ায় কষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, হিং¯্র এই প্রাণি যে কোনো সময় যে কাউকে দংশন করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে তারা সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় বলে জানান তিনি।
খামারি কাউসার বলেন, সরকারি নীতিমালা থাকলেও তারা পাচ্ছেন না অনুমোদন।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমানবলেন, আমি নিজে কয়েকবার প্রদীপে সাপের খামার পরিদর্শন করেছি। অনুমোদনের জন্য আমরা সহযোগিতা করতেছি। তিনি আরো বলেন, দেশে সাপের বিষের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সাপের খামার করতে উৎসাহিত ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে দেশের মুদ্রা সা¯্রয় হবে এবং খামারিরাও লাভবান হবেন।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাকছুদুল ইসলাম বলেন, সাপের খামার ব্যতিক্রমী ব্যবসা। ব্যতিক্রমী এই সাপ খামারীকে উৎসাহিত এবং সহায়তা করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।