যেভাবে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম
জাতিসংঘের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইভেন্টের বর্ণনার কোথাও বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের কথা উল্লেখ নেই! বিষয়টি চোখে পড়া মাত্রই চোখের সামনে মলিন হয়ে গেল আমার বাংলা মায়ের মুখ। ২১ এর ভোরে শহীদ মিনারে খালি পায়ে ফুল দিতে নিয়ে যাওয়া আজকের শিশুকে কী গল্প শুনাবো আমরা? ডিজিটাল গলিপথে রোজ ঘুরে বেড়ানো শিশুটি কি কেবল আমাদের মুখের কথায় ভরসা করবে?
অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জাতীয় চেতনার জায়গা। ভাষার জন্য বাঙালি জাতি রাজপথে রক্ত ঝরাতে পিছপা হয়নি। বায়ান্নর ২১ এর পথ বেয়ে বাষট্টির ৬দফা , উনসত্তরের গণ-অভ্যুথ্যান, একাত্তর এর মুক্তির সংগ্রাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বাংলা ভাষার সে চেতনাকে উপলব্ধি করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৯তম নিয়মিত অধিবেশনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাই বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদনও জানিয়েছিল কানাডায় বসবাসরত দু’জন বাঙালি জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ সালে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বর্তমানে জনগোষ্ঠীর বিচারে বাংলা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। আমরা যখন স্বপ্ন দেখছি বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম অফিসিয়াল ভাষা ঘোষণার জন্য দাবি তোলার, ঠিক সে সময়ে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ওয়েবপাতার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইভেন্টের বর্ণনার কোথাও বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের কথা উল্লেখ নেই! যে দিবসটির পেছনে বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশ জড়িত সেখানে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইভেন্টের বর্ণনায় বিষয়টি উল্লেখ না থাকা আমাদের ব্যথিত করবে তাই স্বাভাবিক।
মা-মাতৃভাষা-মাতৃভূমি এই তিনটি শব্দ ছকে আমাদের পরিচয় গাঁথা। ছোটবেলা থেকে এখানে কোন ছাড় দিতে শিখিনা আমরা। এমন কি দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থাকলেও। মা-মাতৃভাষা-মাতৃভূমি শব্দ তিনটি নিজেই নিজের মনে আওড়াতে থাকলাম। কিন্তু কি করা যায় ভাবতে লাগলাম। সেদিন ছিল ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ। হাতে সময় বেশি নেই। ২১শে ফেব্রুয়ারির আগেই এই তথ্যটি যুক্ত করতে হবে জাতিসংঘের সাইটে। সারা বিশ্ববাসী যেদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে সেদিন তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ব প্রেক্ষাপট। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে বাংলা ভাষার শহিদদের সম্মানপূর্বক যে স্বীকৃতি আমাদের দিয়েছে আমরা তা হারাব কেন! ২০০০ সাল থেকে ২০১৮, গত ১৮টি বছর ধরে যা আমাদের অবহেলায়-অসচেতনতায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আড়ালে রয়ে গেছে তার দায়ভার কার? তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করা বোকামি হবে মনে হল। সে রাতেই জাতিসংঘের ওয়েবপাতায় গিয়ে দ্রুত লিখে ফেললাম একটি ইমেইল। তাদের জানালাম, জাতিসংঘের অফিসিয়াল ওয়েবপাতার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইভেন্টের বর্ণনার কোথাও বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের কথা উল্ল্যেখ না থাকা আমাদের ব্যথিত করেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ব প্রেক্ষাপট অংশে বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন, শহীদ দিবস ও বাংলাদেশের বিষয়গুলো যুক্ত করার অনুরোধ জানালাম।