মাতৃভাষা দিবস মাসে উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার দাবি
মাতৃভাষা দিবস মাসে উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার দাবি
জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ নিরেন দাস।
অমর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস মাসে আদিবাসীদের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার দাবি আদিবাসী নেতাদের। সরকারিভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের সংখ্যার সঠিক কোন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে বরেন্দ্র অঞ্চলের জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১৫ লাখ আদিবাসী বসবাস করছে। এ অঞ্চলে বর্তমানে উড়াও, সাঁওতাল, পাহান, মালো, মাহালী, মুন্ডা, মইশরসহ প্রায় ৩৬টি আদিবাসী জনগোষ্ঠি রয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। অন্য ভাবে বলতে গেলে এই আদিবাসীরাই প্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। কিন্তু নানা কারনে হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। এই জন্য আদিবাসীরাও দায়ী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আদিবাসী নেতারা।
বাংলাদেশ জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, রবীন্দ্রনাথ সরেন ও সাধারণ সম্পাদক সবিন মুন্ডা ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস মাসে সরকারের প্রতি দাবি রেখে বলেন সরকারিভাবে আমাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সহ আমাদের শিশুদের বাংলা ভাষার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ভাষায় পড়াশুনার সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানান।
তারা অভিযোগ করে বলেন, আদিবাসীদের মধ্যে যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে তারা নিজেরাই ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে মিশে যাচ্ছে মূল ধারার সঙ্গে। তারা অনেক সময় নিজেদের আদিবাসী বলে পরিচয় দিতেও সঙ্কোচ বোধ করে। এ কারণে আদিবাসীদের সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আদিবাসীরা কারামপূজা, সহরাইপূজা, বাহা উৎসব, ফাগুয়া উৎসব পালন করে থাকে। এসব উৎসবে আদিবাসীরা আগে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশন করতো। কিন্তু বর্তমানে আদিবাসীদের অভাব অনটনের কারণে তাদের সেই উৎসবগুলো তেমন ভাবে আর পালন করতে পারছে না তারা। এছাড়া অনেক স্থানে আদিবাসীর আসে পাশে অ-আদিবসীদের বসতি গড়ে উঠায় তারা আগের মত স্বাধীন ভাবে নিজেদের সাংস্কৃতিক উৎসব গুলো পালন করতে পারছেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আদিবাসীদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা সংগঠন আদিবাসী উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক দিপংকর লাকড়া বলেন, আমাদের দেশের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির ধারা অব্যহত রাখার জন্য আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
এই বিষয়ে মহাদেবপুর-বদলগাছী আসনের সাংসদ সদস্য, ছলিম উদ্দীন তফরদার সেলিম.এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় আদিবাসী অধ্যুশিত এলাকায় আদিবাসী গবেষণা ইন্সিটিটিউট তৈরি, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, হরিজন ভাতা,ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, প্রধানমন্ত্রীর নিজ তহবিল থেকে আদিবাসীদের স্বনিভর করতে রিক্সা-ভ্যান প্রদান, সরকারি চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোটা সহ তাদের উন্নয়নের নানা বিদ উদ্যোগ নিয়েছেন, তবে পাহাড়ী ও সমতলের আদিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা সমান হলে এ অঞ্চলের আদিবাসীদের উন্নয়ন দ্রুতত্বরান্মিত হবে এটা আমার বিশ্বাস বলেন এমপি।