পাটকে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির নতুন পরিচালক হিসেবে আখ্যায়িত করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর বলেছেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত ও প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অন্যতম পরিচালক। কিন্তু ভবিষ্যতে পাট হবে এই প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি।
বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে (ডিসিসিআই) জাতীয় পাট শিল্পের উন্নয়নে পাটের বহুমুখীকরণ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
ডিসিসিআই এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, প্রাচীনকাল থেকে পাটের মাধ্যমেই কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। পাট শুধুমাত্র সোনালী অতীতই নয়, সোনালী ভবিষ্যতও।
তিনি বলেন, গত কয়েক দশক ধরে তৈরি পোষাক খাত এবং প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালক হিসেবে কাজ করছে, এখন সময় এসেছে নতুন চালক খুঁজে বের করার এবং এক্ষেত্রে পাটের সম্ভাবনা খুবই বেশি।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এর এই নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে অর্থনীতির জন্য নতুন একটি শক্তিশালী চালক প্রয়োজন, যা পাটের মাধ্যমে সম্ভব। তাই পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানো দরকার।
দেশের ৪ কোটি মানুষ সরাসরি পাট খাতের সাথে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, সরকার ‘জুট প্যাকেজিং এ্যাক্ট’ এর মাধ্যমে প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কারণে দেশের পাটের উৎপাদন বেড়েছে, চাষীরাও ভালো দাম পাচ্ছে।
পাটের উৎপাদন বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দেশের পাটের উৎপাদন ছিল ৬৫ লাখ বেল, ২০১৫ সালে ৭০ লাখ বেল, ২০১৬ সালে ৮৫ লাখ বেল এবং ২০১৭ সালে ছিল ৯২ লাখ বেল। এছাড়া বর্তমানে উদ্যোক্তারা ২৪০ ধরনের পাট পণ্য উৎপাদন করছে, ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৫টি।
পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য পাট বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম আরো বাড়ানো দরকার। এসময় তিনি স্বল্পমূল্যে পাটের তৈরি ব্যাগ উৎপাদন করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৯৬২ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, তবে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ, বাণিজ্যিক সৃজনশীল-জ্ঞান স্বল্পতার জন্য পাটের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে এবং কাঁচাপাটের প্রায় ৯০ শতাংশই রপ্তানি করে-এমন তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে পাটের বাজার পুনরুজ্জীবিত করতে ‘জুট পাল্প পেপার অ্যাক্ট’ এবং ‘পাট আইন’ প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।
ডিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, পাট কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বিপর্যয় রোধে সর্বোৎকৃষ্ট বিকল্প, তাই বাজারের চাহিদা ও ক্রেতার পছন্দের ভিত্তিতেই পাটপণ্যের বহুমুখীকরণের উপর আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।