জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ সমস্ত বাধা অতিক্রম করে নতুন উদ্যোমে এগিয়ে চলেছে নিয়ামতপুরের পাঁচ জয়িতা
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ এর আওতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে নির্বাচিত ৫ জয়িতা সমস্ত বাধা অতিক্রম করে নতুন উদ্যোমে এগিয়ে চলেছে। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু, নিজে অশিক্ষিত হয়েও এবং অর্থনৈতিক সমস্যাসহ সব রকমের বাধা অতিক্রম করে তাঁর সন্তানদের সফলভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা, সমাজে বিভিন্ন মানবতার কাজ করে সমাজে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে যে নারী, অতি দরিদ্র হয়েও নিজের উদ্যোগে কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করে যে নারী, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে নিয়ামতপুর উপজেলার জয়িতা অšে¦ষনে বাংলাদেশ এর জয়িতা নির্বাচন কমিটির নিকট জয়িতা নির্বাচিত হয়েছে তারা হলেন নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রামগাঁ গ্রামের সাহার আলী ও নাদিরা বেগমের কন্যা শারমিন আখতার মনি, সফল জননী নারী উপজেলার কৃষ্ণশাইল গ্রামের মৃত- এমাদ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী খাদিজা বেগম, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী,বাহাদুরপুর ইউপির নাকইল গ্রামের মোঃ আব্দুল হোসেনে স্ত্রী ফাইজান বিবি, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য পাড়ইল ইউপির পৈলানপুর গ্রামের মৃত লাহার সরদারের কন্যা আনোয়ারা বেগম এবং শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী বাহাদুরপুর ইউপির চকমসনুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের কন্যা ফাহিমা খাতুন। এরা পাঁচ জয়িতা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।
শারমিন আক্তার মনি (নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু)ঃ বাল্য বিয়ের স্বীকার হয়েও শুধুমাত্র নিজের অদম্য আগ্রহও অধ্যাবসায়ের কারণে আজ দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করতে যাচ্ছে। মনি জয়িতা অšে¦ষণনে বাংলাদেশের স্বীকৃতি না পেলেও সমস্ত যোগ্যতায় তার রয়েছে।
শারমিন আখতার মনি ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের পরে বাল্য বিয়ের স্বীকার হন। তার বাবা মা ইচ্ছের বিরুদ্ধে একই উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামের মাসুদ ইকবালের সাথে বিয়ে দেন। মনি বিয়ের পীড়িতে বসলেও পড়া লেখা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে পোষন করেন। কিন্তু স্বামী বা স্বামীর বাড়ীর কেউই তাকে পড়ালেখা করতে বাধা প্রদান করে। শত বাধা অতিক্রম করে গোপনে সে পালিয়ে এসে ২০০৯ সালে নিয়ামতপুর উপপজলা সদরে এসএসসি পরীক্ষা দেন। বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। সে এসএসসিতে জিপিএ-৩.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর আবারও পড়ালেখায় বাধা। তারপরেও মনি স্বামীর পরিবারের বাধাকে অতিক্রম করে তানোর উপজেলার তালন্দ আনন্দ মোহন ডিগ্রী কলেজে একাদ্বশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। শুধু মাত্র লেখাপড়া করা ও স্বাবলম্বী হাওয়ার আকাংখা থাকায় শারমিন আখতার মনিকে তালাক দেন। তবুও মনি পড়ালেখা বন্ধ করেন নাই। ২০১১ সালে জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট নিয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ন হন। এবং একই কলেজ থেকে বিএসসিতে ৯৪৭ নম্বর নিয়ে হায়ার ফাষ্টক্লাস নিয়ে উত্তীর্ণ হন। শুরু করেন উচ্চ ডিগ্রী নেওয়ার জন্য। রাজশাহী কলেজ থেকে প্রাণি বিদ্যায় প্রিভিয়াস করে মাষ্টর্স এ লেখাপড়া শেষ করেছেন। শারমিন আক্তার নিয়ামতপুর উপজেলা ও নওগাঁ জেলায়ও জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।
খাদিজা বেগম (সফল জননী নারী)ঃ শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা অব্যাহত রেখেছেন। ৫৯ বছর বয়সেও ৫ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলেছেন। ৫ সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়েও শুধু মাত্র নিজের পরিশ্রমের কারণে সাংসারের অবস্থাও আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিভিন্ন কু-সংস্কার থাকা সত্ত্বেও সব কু-সংস্কার ভেঙ্গে কন্যা সন্তাদের পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। তিনি অশিক্ষিত হয়েও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী করেছেন।
ফাইজান বিবি (অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী)ঃ অল্প বয়সে বিধবা হয়ে অর্থনৈতিকভাবে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েন। তার উপর ৪ সন্তানকে লেখাপড়া শেখানো। তারপরেও শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় সংসারে বিভিন্ন কাজ করে ৪ সন্তানকে লেখাপড়ার পাশাপাশি মানব চুল পক্রিয়াজাত করে অর্থনৈতক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অর্থনৈতিক সামাজিক প্রতিন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও জীবন সংগ্রাম করে তিনি আর্থিকভাবে সফল হয়ছেন। চুল সংগ্রহ পূর্বক প্রক্রিয়াজাতকরণ পেশা হিসাবে গ্রহণ করে নিজের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজের জন্য অসহায় দুঃস্থ মহিলাদের জন্য মাইলফলক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ফাইমা খাতুন (শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী) ঃ পিতা ভূমিহীন এবং ভ্যান চালক হওয়ায় বিদ্যার্জনের জন্য আর্থিক অস্বচ্ছলতার শিকার হয়েছেন। তবুও তিনি লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। দারিদ্রতার করণে তিনি বাল্য বিয়ের শিকার হন। কিন্তু বাল্য বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যান। বাবা মা অর্থের অভাবে বাল্য বিয়ে দিতে চেয়েেিছল। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে টিউশনি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সমাজকর্ম বিষয়ে এমএসএস ভর্তি হন। বর্তমানে এমএসএস এ অধ্যায়নরত। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত সহকারী হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
আনোয়ারা বেগম (সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেন যে নারী)ঃ সমাজ সংস্কারের সাথে জড়িত থাকায় স্বামী তাকে তালাক দেন। তালাকপ্রাপ্ত হয়েও তার সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভূমিহীন। খাস জায়গার উপর বসবাস করে জীবন যাপন করছেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়েও ৩ সন্তানকে সুন্দরভাবে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তিনি মহিলা আওয়ামীলীগের একজন সক্রিয় নেত্রী হিসাবে পরিচিত। পৈলানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানের্জি কমিটির সভাপতি হিসাবে সফলাতার সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাল্যবিয়ে, শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে নিজ এলাকায় নারীদের নিয়ে গ্রামীণ সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তার কর্মকান্ড এখনও অব্যাহত রয়েছে।