ট্রফিটা এখন এক ধাপ দূরে বাংলাদেশের।
মঞ্চ প্রস্তুত ছিলই। প্রস্তুত ছিলেন কুশীলবরাও। মেলাতে হত দুধাপের সমীকরণ। রসদ ছিল আগের দেখাতেই ২১৪ তাড়া করে জয়ের আত্মবিশ্বাস। ধারাপাত গুণে প্রথম ধাপে সাধ্যের সবটুকু ঢেলে শ্রীলঙ্কাকে ১৫৯ রানে আটকে রেখে সলতেটা প্রজ্জ্বলন করেন বোলাররা। সেটাকে জয়ের মশালে প্রজ্জ্বলিত করার বাকি ধাপটা সারতে পরতে পরতে রোমাঞ্চ ছড়ালেন ব্যাটসম্যানরা। যে মশালের আলোয় জ্বলজ্বল করতে থাকা নিধাসের ধাতব ট্রফিটা এখন এক ধাপ দূরে বাংলাদেশের।
কলম্বোর প্রেমাদাসায় এক বল হাতে রেখে ২ উইকেটের জয়ে ১৮ মার্চের ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হয়েছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
শুক্রবার সেমিফাইনালে রূপ নেয়া ম্যাচে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান সাকিব। নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলেছে লঙ্কানরা। জবাবে শেষদিকে পথ হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ। শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৬ রান। মাহমুদউল্লাহ ওই ওভারের পঞ্চম বলে উদানাকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করে জয়ে নোঙর ফেলেন।
এদিন লিটনকে হারিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে এই ওপেনার, রানের খাতা না খুলেই। ধনঞ্জয়ার অফস্টাম্পের অনেকটা বাইরের বল মিডঅফের ওপর দিয়ে পাঠাতে যেয়ে থিসারার তালুবন্দী।
তিনে প্রমোশন পেয়ে ক্রিজে এসেই ধনঞ্জয়াকে দুই চার হাঁকিয়ে শুরু করা সাব্বির রহমানও ফিরে যান আশা জাগিয়ে। লঙ্কান অফস্পিনার পরের ওভারেই শোধ নেন। উইকেট ছেড়ে খেলতে যেয়ে বলের লাইন খুঁজে পাননি, কুশল প্যাড ছুঁয়ে আসা বল গ্লাভসে জমিয়ে স্টাম্প এলোমেলো করে দেন।
সেখান থেকে আশার ভেলা টানতে থাকেন দুই অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। রানের গতিও ঠিক রেখেছিলেন। কিন্তু দুজনের জমে ওঠা ৬৪ রানের জুটিটা বড় হয়নি মুশফিকের সাজঘরে ফেরায়। আপনসোকে উইকেট ছেড়ে এসে মারতে যেয়ে টাইমিংয়ে গড়বড়। পেরেরার ক্যাচ হয়ে থামে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিকের ২ চারে ২৫ বলে দেখেশুনে খেলা ২৮ রানের ইনিংস।
তামিম দ্রুতই তাকে অনুসরণ করলে শঙ্কার মেঘ জমতে থাকে টাইগার ডেরায়। দুই বছর পর টি-টুয়েন্টিতে পঞ্চাশ ছোঁয়া তামিম ৫০ রানে পেরেরাকে ক্যাচ দেন। অফস্পিনার গুনাথিলাকাকে বেরিয়ে খেলতে যেয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা পড়ে ৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ৪২ রানের ইনিংসটি।
সৌম্য সেই শঙ্কা চাপে পরিণত করে যান ১১ বলে ১০ রানে ফিরে। মেন্ডিসের বল বেড়িয়ে এসে মারতে যেয়ে পেরেরার গ্লাভসেই জমা পড়েন। অফস্টাম্পের বাইরের গুগলি পড়তে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে প্যাডের ওপর ছুঁয়ে বল যায় এই উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।
চাপ বাড়লেও তখনও ভরসা যোগাতে ছিলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাটের কাজটা এগিয়ে নিতে না পারেলে শঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হয়। খুব প্রয়োজনের মুহূর্তে বড় শট খেলতে যেয়ে উদানার বলে ধনঞ্জয়ার তালুতে জমা পড়েন ৯ বলে ৭ করা সাকিব।
তবে বিপদ আর বাড়তে দেননি মাহমুদউল্লাহ। চাপের মুখে ম্যাচ শেষ করেই ফিরেছেন। ম্যাচজয়ী ইনিংসটি ৪৩ রানের। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৮ বলে সাজানো।
এর আগে ‘সম্পূর্ণ ফিট’ নিয়মিত অধিনায়ক সাকিবকে পেয়ে উজ্জীবীত বোলিং করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে হাতে বল তুলে নেয়া সাকিবই প্রথম সাফল্য এনে দেন। উইকেট শিকারে তার সঙ্গে মোস্তাফিজ যোগ দিলে উড়ন্ত শুরু পায় বাংলাদেশ।
শুরুতে উইকেট তুলে নেয়ার সঙ্গে রানের চাকা আটকানোর চেষ্টায় সফল হন টাইগার বোলাররা। ইনিংসের প্রথম ওভারে ৩ রান দেয়া সাকিব তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই সাফল্য আনেন। সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন গুনাথিলাকা। অনেকটা দৌড়ে লংঅনে বল তালুতে জমান সাব্বির। ৪ রানে সাজঘরে লঙ্কান বাঁহাতি ওপেনার।
চতুর্থ ওভারের শেষ বলে কুশল মেন্ডিসকে ফেরান মোস্তাফিজ। আগের চারটি বলে ভুগেছেন, সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে শট খেলেন মেন্ডিস। ব্যাটে-বলে হয়নি। মিডউইকেটে সৌম্যর হাতে ক্যাচ। ১৪ বলে ১১ রানের ইনিংস থামে। মোস্তাফিজের ঝুলিতে মেডেন উইকেট ওভার।
মোস্তাফিজের পরের ওভারেই আরেকটি উইকেট হারায় লঙ্কানরা। থারাঙ্গাকে রানআউটে সাজঘরে পাঠায় মিরাজ-ফিজ যুগলবন্দী প্রচেষ্টা। এক বল পরেই আবারও আঘাত হানেন ফিজ। এবার শিকার দাসুন শানাকা। গোল্ডেন ডাক হয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী তিনি। কাটার মাস্টারের ভয়ঙ্কর অস্ত্রেই কুপোকাত। অফস্টাম্পে ফেলা অফকাটারটি বুঝতেই পারেননি শানাকা।
চাপে থাকা লঙ্কানদের পরের ধাক্কাটি দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অলারাউন্ডার জীবন মেন্ডিসকে সাজঘরে পাঠিয়ে। অফস্পিনের বিপরীতে সুইপ করার চেষ্টায় শর্ট ফাইনলেগে মোস্তাফিজের ক্যাচ হন ৩ রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
পরে প্রতিরোধ আসে দুই পেরেরা, কুশল ও থিসারার থেকে। দুজনে জুটি গড়ার পাশাপাশি দ্রুত ঘোরাতে থাকেন রানের চাকাও। এ জুটিতে আসে ৯৭ রান, মাত্র ৬১ বলে। জুটি ভাঙেন সৌম্য। কুশলকে ফিরিয়ে। যাওয়ার আগে কাজের কাজটা করে গেছেন ৬১ রানের ইনিংস খেলে। ৩২ বলে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন, থামেন ৭ চার ও এক ছক্কায় ৪০ বলে সাজিয়ে।
থিসারার ঝড় তোলা ইনিংসটি থামে শেষ ওভারে। রুবেলের বলে তামিমের তালুতে জমা পড়ার আগে ৫৮ রানের ঝড় তুলে যান লঙ্কান অলরাউন্ডার। ৩টি করে চার ছক্কায় ৩৭ বলে ইনিংসে।
সাকিব ইনিংসে দারুণ শুরু এনে দেয়ার পর আর বোলিংয়েই আসেননি, ২ ওভারে ৯ রানে এক উইকেট। স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মিরাজ। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানে এক উইকেট নিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ ৪ ওভার বল করেছেন, কোন উইকেট পাননি। আর স্পিনার হিসেবে খেলা নাজমুল অপু বোলিংয়ের ডাকই পাননি।
সৌম্য ২ ওভারের জন্য ডাক পেয়ে এক উইকেট নেন ২১ রানে। প্রথম ওভার মেডেন নেয়া মোস্তাফিজ পরে তাল ধরে রাখতে পারেননি, ৪ ওভারে ৩৯ রান খরচায় ২ উইকেট তার। রুবেল এক উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৪১ রান।