বাবা-মা সেজে বিদেশে পাচার কিশোরীকে, মৃত্যুর পর অনুদানের টাকা আত্মসাৎ
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি 4TV
গাজীপুরের শ্রীপুরে বাবা-মার ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে ঝুমুর নামে এক কিশোরীকে প্রথমে ওমান পরে সৌদি আরবে পাঠায় এক দম্পতি। এর ছয় মাসের মধ্যে সৌদি আরবের পাশবিক অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে রিয়াদে আত্মহত্যা করে ঝুমুর। এ খবর জানতে পেরে ওই দম্পতি মৃতদেহ না এনে বরং ঝুমুরের পরিবার সেজে অনুদানের টাকার জন্য আবেদন করে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। এর কিছু দিন পরে টাকা বরাদ্দ হয় ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ডের কাছ থেকে। পরে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে টাকাও তুলে নেয় ওই দম্পতি।
৫নং কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ারিশ সনদপত্রে লেখা রয়েছে ২৯/০৬/২০১৭ সালে ঝুমুর সৌদি আরবে আত্ম হত্যা করেন,অপর দিকে আরেক কাগজ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস প্রবাসী কল্যাণ আবেদন পত্রে লেখা রয়েছে যে সৌদি আরবে ঝুমুর ৫/০৭/২০১৭ সালে অসুস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরন করেন।
ঘটনাটি ঘটে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামে। অভিযুক্ত দম্পতি উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামের মৃত জামির উদ্দিনের ছেলে মো. ফারজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী জহুরা খাতুন।
স্থানীয়রা জানান, ঝুমুর বাড়ি গাইবন্ধা জেলার কোন একটি উপজেলায়। আজ থেকে প্রায় চার বছর পূর্বে বান্ধবী তামান্নার সাথে পারি জমায় ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার মাস্টার বাড়ি এলাকায়। চাকুরী শুরু করে একটি গার্মেন্টস কারখানায়। বান্ধবীর পাশ্ববর্তী জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নে বাড়ি। এখানে মাঝে মধ্যে ঘুরতে আসতো সে। এই সুযোগে ফারজুল ও জহুরা দম্পতি ওই কিশোরীকে নিজেদের মৃত মেয়ের মত দেখা যায় বলে, বিভিন্ন সময় কথাবর্তায় মুগ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যেতো। এক সময় তারা সফল হয়ে যায়। পালিত মেয়ে বানিয়ে বাড়িতে তুলে ঝুমুরকে। এর ঠিক কিছু দিন পরেই বেশি টাকা কামানোর লোভ দেখিয়ে এক দালালের মাধ্যমে প্রথমে ওমান পরে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়। এরপর মাঝে মাঝে ওপার থেকে এপারে কল দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরতো ঝুমুর। এসব পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে, গত বছরের জুন মাসের ২৯ তারিখে রিয়াদে আত্মহত্যা করেন । তবে কি কারনে ঝুমুর আত্ম হত্যা করে তা সঠিক কোনো কারন বলতে পারেনি ওই দম্পতি । এ খবর প্রায় সাত মাস পরে জানতে পেরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ, জন্ম সনদসহ আর্থিক অনুদানের সুপারিশের আবেদন পত্রেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে জালিয়াতি করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় ফারজুল দম্পতি। এর কিছু দিন পরে আর্থিক অনুদান হিসাবে তিন লক্ষ টাকা পায় ওই দম্পতি। এই টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ফারজুল ইসলাম ও তার ছেলে সোহেলের সাথে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ হয়। এরপরই স্থানীয় লোকজন জানতে পারে । ঘটনাটি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফেটে যায় পুরো গ্রাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন বলেন, এই দম্পতি এর আগেও এক মেয়েকে নিজেদের মেয়ে বানিয়ে প্রায় বছর ক্ষাণিক বাড়িতে রাখে। পরে আর কোন দিন ওই মেয়েকে পাওয়া যায়নি।
এমন খবর শুনে সংবাদকর্মীরা ছুটে যায় ওই বাড়িতে। গিয়ে ফারজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী জহুরা খাতুনকে ঝুমুর আসল মা-বাবা কিনা জানতে চাইলে প্রথমে রাগান্তিত হয়ে বলে তারাই মা-বাবা। পরে অবশ্য পালিত মেয়ে বলে দাবি করেন, কিন্তু কোথা হতে পালতে আনাহয়েছে তা বলতে রাজি হয়নি ওই দম্পতি। তাদের নিজের মেয়ে না বলে সব কথা স্বীকার করে ফারজুল ইসলাম বলেন, তাকে আমরা বেশ কয়েক বছর পেলেছি। সে সেচ্ছায় বিদেশ যেতে চেয়েছিল। আমরা পাচার করেনি। আর ভুয়া কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের একজন সরকারি কর্মকর্তা সব ব্যবস্থা করে দিছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনা আকতার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানতাম না। তবে দ্রæত বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।