নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা
সদরুল অাইন 4TV
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। মিডিয়ায় এনিয়ে নানা রকমের খবরও বেরুচ্ছে।
তবে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। সংবিধান অনুযায়ী সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা এই প্রসঙ্গে কথা বললেও বিএনপি নেতারা স্পষ্ট করে কোন কথা বলতে চান না। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হলো-‘তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। আর সেই সরকারই সিদ্ধান্ত নিবে কারা নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকবেন।’
যদিও আগামী নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তবে বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের শরিক কোন প্রভাবশালী নেতা যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন সেক্ষেত্রে সরকারের ভিন্ন চিন্তা থাকতে পারে বলে জানা গেছে। এজন্য কেউ কেউ গোপনে সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলেও গুজবের ডালপালা ছড়াচ্ছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। যে সরকার কেবল ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করবে। কোনো পলিসি মেকিং করবে না।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের প্রধান থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি জানান, আগামী নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের নেই।
এদিকে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা হলে সেটা হতে পারে সীমিত আকারের। যদি ত্রিশ সদস্য বিশিষ্ট হয় সেখানে টেকনোক্র্যাট কোটায় বাইরে থেকে অন্তত তিন জনকে নেওয়া যাবে।
নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আগামী অক্টোবরে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করা হবে বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে কয়েকটি মিডিয়ায় নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপি যোগ দিতে পারে বলে খবর প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে: শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হচ্ছেন ড.কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) এই চেয়ারম্যান নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হবার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন। এরইমধ্যে সরকারের তরফ থেকে বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা ফখরুল ও খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে, এমনটাই জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র।
তবে ড.কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, এধরনের খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা ষড়যন্ত্র। সরকার ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার জন্য প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কারো সাথে আমার কোন কথা হয়নি। আমরা আশা করি সাংবাদিকরা সত্য কথা লিখবেন। কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতা আমরা কিভাবে ঠেকাবো?
অলি আহমদ বলেন,আমরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আছি। নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে। তার কারামুক্তি এখন আমাদের প্রধান এজেন্ডা। তার মুক্তির পর আমরা সিদ্ধান্ত নিবো নির্বাচনের ব্যাপারে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার তাদের এজেন্সি এবং দলীয় মিডিয়া ব্যবহার করে অব্যাহত প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য বহুমুখী চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রুপরেখা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ।
আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে কারা মন্ত্রিসভায় থাকবেন। শেখ হাসিনা বা দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন এদেশে হবেনা। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া কোন নির্বাচন হতে দিবে না জনগণ। খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তিনি কারামুক্ত হওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিবো ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে যাবে কি না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য বহু ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ-ইউটিউব আইডি খুলেছে। এসবে কান দেবেন না। এসব সরকারের প্রপাগান্ডা। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি, আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই।
এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, মন্ত্রিসভায় কর্নেল অলি আহমদের যোগদান বা সরকারের সাথে যোগাযোগ-এসব শুধুই গুজব। সরকার এজেন্সির মাধ্যমে এইসব মাঠে ছেড়ে পরিস্থিতি যাচাই করছে। জোট ভাঙ্গার চেষ্টাও হতে পারে এটা।
তবে রাজনীতিতে শেষ বলে যেমন কোন কথা নেই,তেমনি নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা এখনি বলা যাবে না। দশম সংসদ নির্বাচনের মতো আর ভুল করবে না এলডিপি।