বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয়ে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন আটক
বিশেষ প্রতিনিধি 4TV
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাহাগুন্দা গ্রামের ধর্ষণ, চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলার আসামী সেই রফিজুল ইসলাম ওরফে লাল মিয়া এবার নিজেকে এলাকার একজন কোটিপতি ও বেসরকারী টিভি চ্যানেল জেলা প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে কলেজ ছাত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে এনে ঘরে আটকে রেখে দুই দিন ব্যাপি ধর্ষণ করার অভিযোগে গাংনী থানায় মামলা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হাসপাতাল বাজার এলাকার রমজান আলীর স্ত্রী জাহানারা খাতুন আজ সোম বার বাদী হয়ে গাংনী থানায় মামলাটি করেন। গাংনী থানার তদন্ত কর্মকর্তা (তদন্ত ওসি) সাজেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সাংবাদিক পরিচয় দানকারী রফিজুল ইসলাম ওরফে লাল মিয়াকে ১নং আসামী ও কালাম হোসেনের স্ত্রী হাজেরা খাতুনকে ২ নং তার মেয়ে কাকলী খাতুনকে ৩ নং আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দম আইন (সংশোধিত ২০০৩) এর ৭/৯(১)/৩০ ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে। যার নং ১২, তারিখ ০৯/০৭/১৮ ইং। এ মামলায় কাকলী খাতুনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে প্রধান আসামী রফিজুল ইসলাম ওরফে লাল মিয়া ও ২ নং আসামী হাজেরা খাতুন পলাতক রয়েছে। কলেজ ছাত্রীর মঙ্গলবার (১০ জুলাই) মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সমপন্ন করা হবে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম। কলেজ ছাত্রী জানান, বেসরকারী টিভি চ্যানেল সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তিন বছর আগে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। রফিজুল ইসলাম নিজেকে অবিবাহিত ও এলাকার কোটিপতি পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দিতে থাকে। এটা তার মিথ্যা প্রলোভন ছিলো তা আমার জানা ছিলো না। আমি তার মিথ্যা প্রলোভনে তার ডাকে বিভিন্ন এলাকায় সাড়া দিয়ে আসছি। গত ৭ জুলাই সে আমাকে মেহেরপুরে আসতে বলে। আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। সে আমাকে তার চাচা কালাম হোসেনের বাড়িতে রেখে প্রথম দিনে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে চার বার ধর্ষণ করে। পরে গত ৮ জুলাই দিবাগত মধ্য রাতে গাংনরী থানা পুলিশের একটি টীম আমাকে উদ্ধার করে। ওসি তদন্ত সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওই কলেজ ছাত্রী চুয়াডাঙ্গার শিশু সদনে থেকে লেখাপড়া করতো। এবছর সে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে। তাকে প্রথম রাতে চার বার ধর্ষণ করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন ভুক্তোভোগি ছাত্রী। এদিকে এ ছাত্রীকে বাড়িতে আশ্রয়দান কারি তার চাচাতো বোন প্রবাসী বাবলুর স্ত্রী রুমানা খাতুন জানান, চাচাত ভাই রফিজুল ইসলামকে এ কাজে সহযোগীতা করা না হলে আমার বাবা কালাম হোসেনকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিল। এদিকে গাংনী থানা ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রফিজুল ইসলাম ওরফে লাল মিয়ার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। জানা গেছে, এ উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে (কলেজ ছাত্রী) ধর্ষণের অভিযোগে একই গ্রামের কামরুজ্জামান খোকনকে প্রধান ও বাহাগুন্দা গ্রামের রফিজুল ইসলাম ওরফে লাল মিয়াকে ২ নং আসামী করে বিগত ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং জিআর ৩৩৫/১৭, বাহাগুন্দা গ্রামের জসির উদ্দীনের মেয়ে ডালিয়া নাসরিন বাদী হয়ে রফিজুল ইসলাম ওরফে লাল মিয়াকে ১ নং ও তার চাচা কালামকে ২ নং আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৯৫/১৬ ইং। নারী নির্যাতন দমণ আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯(৪) (খ) ৩০ ধারা। একই গ্রামের আবেদ আলীরর ছেলে নুর ইসলাম বাদী হয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ২০০৮ সালে লাল মিয়াকে ১ নং আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ০৭, তারিখ ১৪/০৪/২০০৮ ইং, ধারা ৩৪১/৩২৩/৩৭৯/দন্ডবিধি। একই ব্যাক্তি ২০১৬ সালে লাল মিয়াকে ২ নং আসামী করে একই ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ২৭. তারিখ ৩০/০৫/১৬ ইং। এসব মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছেন। এলাকাবাসি জানিয়েছেন, রফিজুল ইসলাম ওরফে লাল মিয়া পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। সাম্প্রতিক সময়ে সে তার পেশা পাল্টিয়ে বেসরকারি টিভির মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছিল। গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, এ মামলার সহযোগী কাকলী খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধান আসামীসহ বাকী আসামীকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।