তিন সিটি নির্বাচনে শুরুতেই ব্যাকফুটে বিএনপি
সদরুল অাইন :
রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশাল সিটি নির্বাচনকে বলা হচ্ছে রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। বিএনপি বলছে এই তিন সিটি নির্বাচনে তাঁরা অংশগ্রহণ করছে আওয়ামী লীগের মুখোশ উন্মোচনের জন্য। তিন সিটি নির্বাচনের পর বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সম্ভব কি না।
কিন্তু তিন সিটি নির্বাচনে যাওয়ার আগেই বিএনপি বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে। একদিকে বিএনপির মধ্যে দলীয় দ্বন্দ্ব ও কোন্দল, অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বিশেষ করে জামাতের সঙ্গে টানাপোড়ন প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। যে কারণে আসন্ন এই তিন সিটি নির্বাচনের শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে গেছে বিএনপি।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১৪-দলীয় জোটের একক প্রার্থী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। অন্যদিকে মেয়র পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও জামায়াতের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় বিপাকে রয়েছে বিএনপি।
আমীর খসরু ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে গিয়েও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা মীমাংসায় আসতে পারেনি। সিলেটে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জমান সেলিমকে এখন পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়নি।
গতবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিগত সময়ে টিকে থাকার জন্য এক পর্যায়ে মুহিতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতো। এর ফলে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর উপর অনেকটাই ক্ষুব্ধ।
অপরদিকে বদরুজ্জমান সেলিম সিলেটের রাজনৈতিক মাঠে বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তি। তরুণ ভোটার ও কর্মী সমর্থকরা তাঁর সঙ্গে রয়েছে। সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির ভোটারদের বড় একটি অংশ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের পক্ষেই থাকবে।
অন্যদিকে বিএনপির শরিক দল জামায়াতের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে অনড় অবস্থানে রয়েছে। সিলেটে জামাতের প্রায় ৩০ হাজার ভোট রয়েছে বলে জানা যায়। জামাতের এই ৩০ হাজার ভোট জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে। সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের ভোট কার্যত তিন ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ফলাফল কোন দিকে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাজশাহীতে মেয়র পদে জামাত কোনো প্রার্থী না দিলেও প্রতিটা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে। জামাতকে রাজশাহীতে ২০ দলীয় জোটের কোনো সমন্বয় সভায় দেখা যায়নি । রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির কোনো সমন্বয়ক কমিটিতেও নেই জামাত। রাজশাহী সিটিতে জামাতের বিশাল ভোট ব্যাংক এবং অনেক কর্মী সমর্থক আছে। জামাতের এই ভোট ব্যাংক রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিশাল একটি ফ্যাক্টর। তবে এখানেও বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামাতের সম্পর্ক ভালো নয়।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সারোয়ার দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিলেন। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে তাঁকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তেমন একটা থাকতে দেখা যায়নি।
অপরদিকে বরিশালের মেয়র আহসান কামাল স্থানীয় বিএনপির দল গোছানোসহ নেতা কর্মীদের একত্রিত করার বিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। যে কারণে বরিশাল সিটিতে বিএনপি ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আহসান কামাল বেশ জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। বিএনপির মধ্যে তাঁর নিজস্ব ভোট ব্যাংক এবং অনেক কর্মী-সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে।
এবার সিটি নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন না দেওয়ায়, তিনি বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রকাশ্যেই। বরিশাল সিটিতেও অন্য দুই সিটির মতোই বিএনপির দলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
জাতীয় রাজনীতিতে যেমন বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের মতপার্থক্য, অনৈক্য এবং কলহ বিরাজমান, তারই ধারাবাহিকতা তিন সিটিতেও লক্ষণীয়।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটগত কলহের প্রভাব তিন সিটি নির্বাচনে তাঁদের পক্ষে যে ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না তা বলাই যায়।