কে হবেন নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান? টালমাটাল বিএনপি
সদরুল অাইন :
বিএনপির নেতৃবৃন্দ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছেন না। এদিকে নির্বাচন কমিশন অনানুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের গঠনতন্ত্র কমিশনে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না।
বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, আইনি লড়াই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অন্দোলন, তিন সিটি নির্বাচনসহ নানা রকম চাপের মধ্যে আছে বিএনপি। এরমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের এই তথ্য নতুন চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র গ্রহণযোগ্য করতে হলে বাদ দেওয়া ৭ ধারা বলবৎ রাখতে হবে। আর তখন দুর্নীতির দায়ে কারান্তরীণ খালেদা জিয়া ও লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। তাই এখন বিএনপির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, কে হবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান?
গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, আইনি লড়াই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অন্দোলন, তিন সিটি নির্বাচনের চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রশ্নেই আলোচনা হয় বেশি। নির্বাচন কমিশনের অনানুষ্ঠানিক তথ্য নিয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপি নেতারা। এখন পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তাঁরা।
গতকাল গুলশানের বৈঠক থেকেই বিএনপি নেতারা বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। নির্বাচন কমিশনের অনানুষ্ঠানিক তথ্যের কথা শামীম ইস্কান্দারকে জানানো হয়। বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা হয়। আর এ কারণেই বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য হঠাৎ করেই এতটা উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি দ্রুত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে চায়, যেন নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিষয়টি জানাতে পারে।
জানা গেছে, গতকাল বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত হতে পারেন সম্ভাব্য এমন কয়েকজনের বিষয়ে কথা হয়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের শুরুতেই ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তালিকা অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে সিনিয়র। কিন্তু ড. মোশাররফকে এই পদে আনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েকজন বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে। তাঁর কোনো কিছু হলে তখন কি আবার পরিবর্তন করা হবে? এমন পরিবর্তন তো বার বার করা যায় না। এই প্রেক্ষাপটে বাদ পড়েন ড. মোশাররফ।
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। কারণ ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হলে মহাসচিব হবেন কে?
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মির্জা ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হলে পদক্রম অনুযায়ী মহাসচিব হন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী দল চালাবে, কথা বলবে আর আমরা তাই শুনবো?’ এই বিবেচনায় সম্ভাব্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলোচনা থেকে বাদ পড়েন মির্জা ফখরুলও।
বিশ্লেষকরা বলেন, বিএনপি যখনই কোনো বড় চাপে পড়েছে তখনই উদ্ভট কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পদে নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ বাইরের কাউকে। এর আগে ডা. বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি থেকে বাদ দেওয়া হলে সেই স্থলে নিয়ে আসা হয়েছিল ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে। ৯১ সালে রাষ্ট্রপতি করা নিয়ে বিপদে পড়লে বিএনপি নিয়ে এসেছিল আবদুর রহমান বিশ্বাসকে, যিনি ছিলেন ওই সময় সম্পূর্ণ অপরিচিত। আর এই অপরিচিত, ‘আউট অব দ্য বক্স’ ব্যক্তিদের রেকর্ডও ভালো না।
জানা গেছে, এবার বিএনপির এমন অকুল পাথার সময়ে জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত পদের জন্য ভাবা হয়েছে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে। এই প্রবীণ আইনজীবীর সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। বিএনপি আমলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার থাকা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন কখনো বেগম জিয়া ও তারেকের কোনো কথার বাইরে যাবে না, অন্তত আগের রেকর্ড তাই বলে। তবে জমির উদ্দিন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায়ও বিপদ আছে। সেক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মওদুদ, ড. খন্দকার মোশাররফের মতো সিনিয়র নেতারা স্বভাবতই তাঁকে মানবেন না।
এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আলোচনায়ই চাপা পড়েছে সব ইস্যু। খালেদার মুক্তির জন্য আন্দোলন, নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন, সিটি নির্বাচনের প্রচারণা সবকিছু ছাপিয়ে এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়া নিয়েই টালমাটাল বিএনপি।