তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত একটি জনসভায় দলটির সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাষণ নিয়ে তুমুল উৎসাহ
তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত একটি জনসভায় দলটির সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাষণ নিয়ে তুমুল উৎসাহ তৈরি হয়েছে। কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় এ সভায় শনিবার (২১ জুলাই) দুপুরে বক্তব্য রাখবেন মমতা ব্যানার্জি। ইতিমধ্যেই কলকাতায় বেশ কিছু রাস্তায় জনপ্লাবন শুরু হয়েছে।
সভায় নিরাপত্তায় ৬ হাজার পুলিশ ও ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সহ প্রায় ৪ হাজার ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়াও আকাশ থেকে নজরদারি চালানো হচেছ। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে এজন্য শুক্রবার (২০ জুলাই) রাত থেকেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ।
২১ জুলাইয়ের এ সভায় শুধু কলকাতা ও এর আশপাশের জেলা থেকেই তৃণমূল সমর্থকরা আসবেন, তা নয়। বরং রাজ্যটির বাকি ২২ জেলায় থেকে লাখ লাখ মানুষ সভায় যোগ দিতে রওনা দিয়েছেন।
এ সভায় কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষের জমায়েত হবে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের আশা। যদিও সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে, প্রতিকুল আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ মঞ্চের দিকে ছুটছেন।
মূল মঞ্চের পাশাপাশি কলকাতার চারটি প্রবেশ পথে ছোট-ছোট মঞ্চ করে সেখানেও জায়েন্ট স্ক্রিনে মমতা ব্যানার্জির ভাষণ শোনানো হবে। ওই মঞ্চ গুলোতেও লাখ লাখ মানুষের ভিড় হবে বলে আশা তৃণমূল কংগ্রেসের।
বামফ্রন্ট সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯৯৩ সালে ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জির রাজ্যটির সচিবালয় মহাকরণ ঘেরাও ডাক দিয়েছিলেন। সেদিনের ওই কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়। মূলত ওই দিনকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতেই তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর থেকে মমতা ব্যানার্জি ২১ জুলাই এমন সভা করেন। কাগুজে কলমে শহীদ সভা বলা হলেও গত কয়েক বছরে এটা তৃণমূলের প্রধান রাজনৈতিক সমাবেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে।
২১ জুলাইয়ের সভা থেকেই দলীয় নেত্রী রাজ্যে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে পরবর্তীতে ৩৬৫ দিনের একটি রাজনৈতিক রূপরেখা এঁকে দেন। নেত্রীর একে দেওয়া পথ ধরেই দলীয় কর্মীরা হেঁটে আবার ঘুরে আসেন ২১ জুলাইয়ের এদিনের সমাবেশে।
তবে এবারের সমাবেশটির অতিরিক্ত তাৎপর্য রয়েছে বলে দাবি করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলটির মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, এবার ২৫ বছর পূর্তি হবে ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ। দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে এখনই সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবার। ধর্মতলার এই সমাবেশ থেকে দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি তৃণমূল স ধর্ম নিরপেক্ষ সকল মানুষ, গোষ্ঠীকে সেই দিশা দেখাবেন।
শনিবারের এই সভায় মমতা ব্যানার্জিই প্রধান বক্তা হলেও দলের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা বক্তব্য রাখছেন। প্রতিবছরই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে অন্য রাজনৈতিক দল, সেলিব্রেটি কিংবা ব্যবসায়ীদের তৃণমূলে যোগ দানের ঘটনা দেখা যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রকাশ্যে না হলেও ইতিমধ্যে সিপিআইএমের বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা মমতা টিমে নাম লিখিয়েছেন। কংগ্রেস থেকে এক পা বেরিয়ে আছেন রাজ্যের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্বও। আজকের সভায় চমক দেখা যেতে পারে এসব নিয়েও।
সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ঢালাও জয়ের পরে ২১ জুলাইয়ের এই সমাবেশ হচ্ছে। অন্যদিকে ঘাড়ের পাশে নিঃশ্বাস ফেলছে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। ৪২ আসনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সব গুলো আসনই তৃণমূলের টার্গেট এবার।
সবশেষ লোকসভা নির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪ আসন পেয়েছিল। বিজেপিকে রুখে ৪২ এর ৪২টিই আসনে জয় নিশ্চিত করে ভারতের প্রাদেশিক রাজনৈতিক দল ও বিজেপি বিরোধী জোটকে একাট্টা করার ডাকও আজ শোনা যেতে পারে তৃণমূল সভানেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কণ্ঠে।