পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভাইদের হাতে ভাই খুনের দশ দিনের মাথায় চ্যঞ্চল্যকর রহস্যে উদঘটন।
উত্তম কুমার,বাকেরগঞ্জ 4TV
বাকেরগঞ্জ কবাই ইউনিয়নের শিয়ালঘূনী গ্রামের বহুল আলোচিত নিজাম তালুকদার (৩৮) এর ভাসমান লাশ, নদী থেকে উদ্ধার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সহদয় ভাই লিংকন তালুকদার (৩০) ও সাইফুল তালুকদার (২৮) এর, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারুক্তি মূলক জবান বন্ধী প্রদানের মধ্যে দিয়ে এই চ্যঞ্চল্যকর মৃত্যু রহস্যের উদঘটন ঘটে।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়। বিগত ১২/০৭/১৮ ইং তারিখে বাকেরগঞ্জ থানায় নিহতের স্ত্রী হাফসা আক্তার হ্যাপীর দায়ের করা মামলা নং ১০ অভিযোগের ভিক্তিতে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তৎক্ষানিক ভাবে সহাদয় দুই ভাইকে গ্রেফতার করে প্রথমে থানায় পরবর্তীতে বরিশাল কোর্ট হাজতে প্রেরন করে।
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট রিমান্ডের আবেদন করলে, ব্যপক জিজ্ঞাসা বাদের এক পর্য্যায় আসামীদ্বয় সহজেই স্বীকারুক্তি মূলক জবান বন্ধী দিতে রাজি হয়। পরবর্তীতে বিগত ২১/০৭/১৮ ইং তারিখে সকাল ১০ ঘটিকায় ১নং আসামী লিংকন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরীনের খাস কামরায় ও ২নং আসামী সাইফুল ইসলাম ১৯/০৭/১৮ ইং তারিখ দুপুর ১:৩০ ঘটিকায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক হোসেনের খাস কামরায় বসে স্বীকারুক্তি মূলক জবান বন্ধীদেন।
যাতে ১নং আসামী তার ভাই নিজামের সাথে অর্থিক লেনদেন জনিত বিরোধের জেরে খুন করছেন বলে জানান। সে উল্লেখ করে বলেন তার ভাই নিজাম বহু বছর বিদেশ থেকে অনেক টাকার মালিক হন।
সে বিগত ২ বছর পূর্বে দেশে এসে আমাকে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য একটা মটর সাইকেল কিনে দেন। এছাড়া কিছুদিন পূর্বে একটা মামলার জামিনের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা দেন। সে টাকা লেন দেনের ব্যর্থতার কারনে, ভাইয়ের সাথে প্রায় সময় বিরোধের সৃষ্টি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটতো। এই নিয়ে দিন দিন নানা ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা অবস্হায়। ছোট ভাই সাইফুলের পরামর্শে ও সহযোগীতায় তাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেই।
ঘটনার দিন ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সহায়তায় নিজামকে সন্ধারাতে খাবারের সাথে মাত্রা অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়া বরিশালে অবস্হান করা ছোট ভাই সাইফুলকে ফোন করে আসতে বললে। ও রাত্র ১১টায় পেয়ারপুর আসে। সেখান থেকে আমার বন্ধুকে সাথে নিয়ে পেয়ারপুর থেকে তিনজনে একাত্রে বাড়িতে এসে ওদের দুজনকে নিরাপদে রেখে আমি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দেখি নিজাম ভাই ঘুমে অচেতন।
ঘরের ভিতর চাচারা বিশ্বকাপের ফুটবল খেলা দেখায় মসগুল। খেলা দেখা শেষে তারা সবাই ঘর থেকে বের হয়ে গেলে আমি সামনের দরজা বন্ধকরে। পিছনের দরজা খোলা রেখে সাইফুল ও আমার বন্ধুকে ডেকে এনে রাত্র ২টা ৩০ মিনিটের সময়ে তিন জনে মিলে ঘুমান্ত ভাইয়ের হাত পা বাধিঁ।
সে সময় ভাই একটু লাড়াচাড়া করলে আমি তার বুকচেপে ধরি, সাইফুল বালিশ দিয়ে তার নাক মুখ চেপে ধরে আর আমার বন্ধু তার পা চেপে রাখে। এ ভাবে ৫/ ৬ মিনিট রাখার পরে তার লাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে যায়।
তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে পছনের দিকের রাস্তাটি দিয়ে গলায় দরি বেধেঁ টেনে নদীর পারে নিয়ে যাই। সেখানে একটা সিন্দুকের সাথে বেঁধে তার লাশ নদীতে ডুবিয়ে দিয়ে আমরা রাস্তায় চলে আসি। সে সময় মসজিদে আজানের শব্দ পেয়ে দ্রুত সাইফুল আর বন্ধুটিকে বরিশালের দিকে চলে যেতে বলে আমি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করি।
২নং আসামী সাইফুল জানান, তিনি মালদ্বীপে অবৈধভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন যেনে তার মেঝ ভাই নিজাম তাকে দেশে ফিরে আসতে বলেন। আরো আশ্বাস দেন দেশে এলে তোকে একটা ব্যবসা ধরিয়ে দিব। তার আশ্বাস পেয়ে আমি বিগত ১০ মাস পূর্বে বাড়ি চলে আসি। ঐ দিকে ভাই আমাকে ব্যবসা ধরিয়ে দেবার কথা বলে দেশে এনে নানা রকম টালবাহানা করতে থাকে।
তার কাছে বিষয়টি তুললে সে আমাকে গালিগালাজ করে এবং নিজের কাছে রেখে ফাই ফরমাইস খাটাতে থাকে। এক পর্য্যায় কাছাকাছি অবস্হান করায়,, ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে আমার দৈহিক সম্পার্ক গড়ে উঠে। তখন তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলে। সে আমাকে বলে তোমার ভাই জীবিত থাকতে সেটা কি করে সম্ভাব? তার চেয়ে তাকে মেরে ফেলতে পারলে বিষয়টি সহজ হতো।
তখনি নয়া ভাই লিংকনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে তাকে মেরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার স্হীর সিদ্ধান্ত নেই। কারন পূর্বের আমার জানা ছিল লিংকন ভাই সুযোগ পেলে ওকে সহজেই খুন করতে রাজি থাকবে। তাই দুজনে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে বিগত ১০ তাং রাত্রে সুুযোগটা পেয়ে প্রথমে ঘুমের ঔষধ খেতে দিয়ে অচেতন করে রাত্র ২ টা ৩০ মিনিটের সময় অন্য আর একজন লোকের সহায়তায় হাত পা বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে গলায় রশিবেঁধে নিকট বর্তী নদীর সাইডে গিয়ে সিন্দুকের সাথে বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দিয়ে আমি সাথের লোকটিকে সঙ্গে করে বরিশালে ফিরে যাই।
লিংকন ভাই বাড়িতে যায়। বিষয়টি সম্পার্কে থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদুজ্জামান জানান ঘটনার পরবর্তী দ্রুত বিচক্ষণতার সাথে ওদের গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেই, অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ব্যপক বিরুপ মন্তর্ব্য করলেও আমার দৃঢ় ধারনা জন্মে পরোকিয়া ও অর্থিক বিষয়ের কারনেই এমন ঘটনার সূত্রপাত। ওদের স্বীকারুক্তি মূলক জবান বন্ধী আমার ধারনাটা আরো পরিনত হলো।
এখন পরবর্তী ব্যবস্হা নেবার প্রক্রিয়ার চলমান।