‘জনগণের সংসদ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হবে না’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করুন। এই নির্বাচন দেশের মানুষ মানে না। একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন। জনগণের সংসদ প্রতিষ্ঠা করুন।
জনগণের সংসদ ছাড়া আপনারা কোনোদিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে পারবেন না।’
শনিবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি এ ব্যাপারে (রোহিঙ্গা ইস্যু) একটা জাতীয় কনভেনশন ডাকা হোক। সবদলগুলোকে এক করে বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একমত সেটাকে প্রকাশ করা হোক। না- এটা তাদের ভাল লাগে না। এরা কখনও জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে একাই সব করতে পারবে। ১৯৭৫ সালেও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করেছে। আবারও তারা ওইদিকেই যেতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এই সময় কাজী জাফর সাহেবের খুব দরকার ছিল। তিনি রাজনীতি খুব ভাল বুঝতেন। সৃজনশীলতার মধ্যে তিনি অনেক নতুন কিছু চিন্তা করতে পারতেন। কৌশল, কর্মসূচি, সংগঠনের দিক থেকে তার মধ্যে সৃজনশীলতা ছিল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে আজকে সংকটময় মুহূর্ত চলছে। দেশের ইতিহাসে এতবড় সংকট আর কখনও এসেছিল বলে আমার মনে হয় না। ৭১ সালে যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে যেসব অর্জন করেছিলাম তা সব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রের যেকথা বলেন, একেবারেই মিথ্যা কথা বলেন। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে শেয়ার মার্কেট ধ্বংস হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেনই না ডেঙ্গুতে কত লোক মারা গেছে। মফস্বল শহরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে মনে হবে না যে এই দেশে সত্যিকার অর্থে কোনো সরকার আছে। ব্যাঙের ছাতার মতো মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি আমরা সবাই দেখি। এই সমস্ত লোকেরা এখন আমাদের শিক্ষার গুরু হয়েছে। কথা শুনলে মনে হয় না, কোনো রকমের শিক্ষা সাংস্কৃতিক তাদের মধ্যে রয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একেবারে দলীয়করণ। বিচারব্যবস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রতিমুহূর্তে চেষ্টা করছে। এখন বাংলাদেশ একটা অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে চলে গেছে।’
‘এ অবস্থায় প্রশ্ন এসেছে আমরা কি করবো? আমরা মানুষের মাঝে আছি। আমরা কখনও পরাজিত হই না। দেশের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিও কখনও পরাজিত হয়নি। তবে হ্যাঁ খারাপ সময় এসেছে। আমরা নীচের দিকে গেছি। সেখান থেকে আবার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছি। আমরা আমাদের রাজনীতিকে সঠিক পথে যদি নিতে পারি। সমস্ত দেশপ্রেমিক দলগুলিকে যদি এক করতে পারি তাহলে বিজয় অবশ্যই আসবে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে কোনো হতাশার ছবি আমরা দেখতে চাই নাই। আমরা হতাশ নই। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাব। মাথানত করতে রাজি না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সভাপতি রিটা রহমান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দীপু প্রমুখ।