চেক জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে তৎপর রুয়েটের প্রভাবশালীরাই
কমিটি গঠনের ১৬ দিনেও তদন্ত শুরু হয়নি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ব্যাংক হিসাব থেকে চুরি যাওয়া সাড়ে ছয় লাখ টাকার চেক জালিয়াতির ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, চেক জালিয়াতি করে ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ চুরি যাওয়ার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রুয়েটের একটি প্রভাবশালী মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। যার কারণে তদন্ত কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
তবে তদন্ত শুরুর আগেই চুরি যাওয়া ওই অর্থ রুয়েটের ব্যাংক হিসেবে ফেরত এসেছে বলে দাবি করেছে একটি সূত্র। তবে কে বা কারা ওই অর্থ রুয়েট হিসাবে জমা দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রুয়েটের হিসাব দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের রুয়েট শাখার একটি চেকের মাধ্যমে রুয়েটের ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা উত্তেলন করা হয়। যে চেকটি রুয়েট কর্তৃপক্ষ ইস্যু করেনি। ঘটনার দুইমাস পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের হিসাব স্টেটমেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাশ বুক মিলানোর সময় বিষয়টি ধরা পড়ে। রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের রুয়েট শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত রাজস্ব বাজেটের ১০৩ নম্বর হিসাব থেকে রুপালী ব্যাংক কাজী নজরুল ইসলাম (কেএনআই) রোড রাজশাহী শাখায় কাগজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রিতা এন্টারপ্রাইজের হিসাবের ওই অর্থ স্থানান্তর হয়। এ ঘটনা তদন্তে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশফিক আহমেদকে সভাপতি করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক এনএইচএম কামরুজ্জামান সরকার ও অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলামকে সদস্য এবং রুয়েটের উপপরিচালক (গশুস) মুফতি মাহমুদ রনিকে সদস্য সচিব করা হয়।
তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুশফিক আহমেদ বলেন, রুয়েট থেকে কাগজপত্র না দেওয়ায় আমি এখনও তদন্তের কাজ শুরু করিনি। কাজেই এ বিষয়ে এখন আমি কিছু বলতে পারবো না বলে জানান তিনি।
তদন্ত কমিটির সদস্য রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক এনএইচএম কামরুজ্জামান সরকার বলেন, তদন্ত কমিটির সভাপতি এখনও তদন্ত শুরু করেন নি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। তবে অপর এক প্রশ্নের জবাবে কামরুজ্জামান বলেন, রুয়েটের ব্যাংক হিসাব থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত এসেছে বলে আমিও শুনেছি। তবে কে কিভাবে ফেরত দিল বা কোন প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নয়। তদন্ত হলে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রিতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহাফুজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি রাহাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তার কিছু জানা নেয়।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে রুয়েট উপাচার্য ড. মুহা. রফিকুল আলম বেগ ফোন ধরেন নি।
রুয়েটের হিসাব দফতর সূত্র জানায়, রুয়েটের সকল চেক ইস্যু হয় কম্পট্রোলার ও রেজিষ্ট্রারের স্বাক্ষরে। চেক থাকে হিসাব শাখার এ্যাকাউন্ট অফিসার আবদুস সোবহান ও জুনিয়র একাউন্ট অফিসার আবদুল বারিক এর কাছে। তাদের দাবি হিসাব দফতরে ক্যাশ শাখা থেকে চেক বহির একটি পাতা চুরি হয়েছিল। তারা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ কথা জানিয়েছে। তবে ক্যাশ মিলানোর আগে এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের নজরে দেয়নি বা ব্যাংকে ওই চেকের ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি।