শ্রীপুরে কৃষিজমিতে অবাধে গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা ॥ সর্বত্রই ভূমিখেকোদের আগ্রাসন
টি.আই সানি,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে ৮টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার কৃষিজমি এখন আর খুব একটা ফাঁকা নেই। দিন দিন খোলা মাঠ আর সবুজ প্রান্তর কমে আসছে। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, দখল, বিক্রিসহ নানা কারণে অকৃষিখাতে যাচ্ছে ফসলের জমি। দখল আর বিক্রির কারণে প্রাকৃতিক জলাভূমিও এখন হাতে গোনা। সরকারী হিসেবে প্রায় ৩০ বছরে ফসলি জমি কমেছে আট হাজার হেক্টরের বেশি। প্রায় সাড়ে ৪০০ হেক্টর পতিত খাস জমির হদিস নেই। যে যার সুবিধামতো এই জমি দখলে নিয়েছে। অনেক সময় প্রশাসনের অজান্তেই বেহাত হয়েছে জমি। দখল আর দূষণের মুখে মৃতপ্রায় এক সময়ের মাটিকাটা সুতিয়া নদী। স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, সম্প্রতি ১৫ ভাগ কৃষিজমি হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে উপজেলার মাওনা,নয়নপুর,ধনুয়া মৌজার দীন পাথারে কৃষি জমি দখল নিয়ে শিল্পকারখানা গড়ে উঠার অভিযোগও রয়েছে। সুলতান হাজী¡ ও মাওনা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন, আফতাব উদ্দিনের দুই বিঘা জমি জোর করে দখল করে রাতের আঁধারে সিমানা প্রাচির করেন,এবং ওই জমিতে বালু দিয়ে ভরাট করছে বলে জানান জমির মালিক আফতাব উদ্দিন। একই অভিযোগ রয়েছে মৃত আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে আব্দুল খালেক মিয়ার। খালেক মিয়া বলেন,পাথারে আমার ২৪শতাংশ জমি জোর করে সিমানা প্রাচির করেছে হাজ্বী সুলতান মিয়া। ক্ষমতাসিন দলের প্রভাব দেখিয়ে শ্রীপুরে চলছে কৃষিজমিতে ভূমিখেকোদের আগ্রাসন।
মাওনা ইউনিয়নে মাওনা উত্তরপাড়া এলাকায় অবস্থিত নোমান গ্রুপ,নয়নপুর রিদিশা গ্রুপ,কনফিন্ডের্সসহ ভিবিন্ন কলকারখানার দূষিত বর্জ্যে পাথারের জমিতে যাওয়ায় ইতোমধ্যে সাড়ে পাঁচ শতাধিক কৃষকের ৩৫০ হেক্টর জমিতে আর ফসল হচ্ছে না।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছে, কৃষিজমি সুরক্ষায় আইন না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। কেউ জোর করে জমি দখল করে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে চাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত আরো বলেন, দিন দিন এলাকায় কৃষিজমি কমছে, তা সত্য। বাস্তবতা হলো, ব্যক্তিমালিকানাধীন কোন জমি কেউ বিক্রি করলে আমাদের করণীয় কিছু থাকে না। তিনি বলেন, যে পর্যন্ত কৃষিজমি সুরক্ষা আইন পাস না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জমি রক্ষায় প্রশাসনিক কোন উদ্যোগ নেয়া সম্ভব নয়। আইনের বিভিন্ন দিক থাকবে, সেসব দিক বিবেচনা করেই জমি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হবে। আইনে কৃষিজমি অকৃতি খাতে যেন না যেতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। আমরা চাই দ্রুত আইনটি পাস করা হোক।
তিনি বলেন, কেউ নিজ থেকে যোগাযোগ না করলে আমরা জানতেও পারি না জমি বিক্রির কথা। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আপোসের মধ্য দিয়েই জমি বিক্রি হয়ে থাকে। জোর করে জমি দখলের পর সেখানে কেউ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাইলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এ ধরনের কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই কৃষিজমি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।